ব্যাংকগুলো ডলারের বিনিময় হারের নামে লুটপাট করছে: জসিম উদ্দিন
আলোচনায় বক্তব্য রাখছেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। ছবি: এআরএইচ ডটকম
ব্যাংকগুলো ডলার বিনিময় হারের নামে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, “ডলারের দাম বাড়িয়ে লুটের মালের মতো প্রতি ডলারে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা দাম রাখছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।”
বুধবার ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জসিম উদ্দিন এ কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন।
রাজধানীর পুরানো পল্টনে ইআরএফ মিলনায়তনে এ আলেঅচনার আয়োজন করা হয়।
জসিম উদ্দিন বলেন, “ব্যাংকগুলোই এখন টাকা-ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেন রেট ঠিক করে। এই রেট ১০৭ থেকে ১০৮ টাকা। এই ব্যাংকগুলোই আবার ঋণপত্র বা এলসি খুলতে প্রতি ডলারে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা নিচ্ছে। এটা রীতিমতো লুটপাট। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বেসরকারি বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, “অনেকেই সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির নামাগ টেনে ধরার কথা বলছেন, আমি এটা বিশ্বাস করি না। সুদ হার বাড়িয়ে রাতারাতি কিছু একটা হয়ে যাবে-এমন না। কারণ আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। অর্থনীতির বড় অংশ ইনফর্মাল। সুদ হার বাড়ালে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ডলারের দাম বাড়াই আর না বাড়াই ব্যাংকগুলো ইচ্ছা মতো দাম রাখছে।”
তিনি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে। এনবিআর অ্যানালগই রয়ে গেছে। ভ্যাট আইনের জন্য অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। এটা করতে হবে। এনবিআরকে ডিজিটাল হতে হবে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ও অ্যানালগ চলতে পারে না। রাজস্ব ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন করতে হবে।
“উপজেলা পর্যন্ত করের অফিস খুলতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে অনেক মানুষ আছে যারা কর দিতে পারে। গত ১৪ বছরে গ্রামে অনেক কাজ করেছে সরকার। এখন গ্রামের অর্থনীতি অনেক ভালো।
৪৩ ধরনের সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। দেশের ছয় কোটি মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন। এই দুই হাজার টাকা কর দেওয়া কঠিন কিছু নয় বলে মনে করেন এফবিসিসিআই প্রধান।
“সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। এজন্য কর নেট বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র বাড়বে।”
‘এনবিআর এফবিসিসিআইয়ের কথা শুনছে না অভিযোগ করে জসিম উদ্দিন বলেন, “একসঙ্গে কাজ করতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে। এনবিআরের সঙ্গে আমাদের একটি টাস্কফোর্স আছে। কিন্তু মিটিং হয় না। মিটিং হলে আলাপ আলোচনা করে যেটা ভালো সেটা করা যায়। এইচএস কোড নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম, এটা নিয়ে কাজ করা যায়। একজন ভুল এইচএস কোডে মালামাল নিয়ে এসেছে, এজন্য দুই শতাংশ জরিমানা দিতে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়।”
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “সরকারের জন্য কঠিন হলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য ও কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য ভালো, এটা আমরা রেখেছি। আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।”
বাজারের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি স্বীকার করেন পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন বা কেনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বারবার উদ্যোগের পরও কাজে আসছে না।”
পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির বিষয়টি উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “যেই আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে সব সময়ই 'ট্রিগারে' হাত রাখতে হচ্ছে।”
“প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশ। এটা অর্জন করা কঠিন হবে। তারপরও চেষ্টা করা হবে।”
“আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করেছি। এগুলো আমরা দেখব। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ আমাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করছে।”
আলোচনায় মূল প্রবন্ধে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক প্রস্তাবিত বাজেটকে ভবিষ্যৎমুখী বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “এখন প্রধান সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধান উদ্যোগের নিতে হবে। নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। চলতি বাজেটে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বছর শেষে তিন লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা উঠতে পারে।
এ বছর রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সম্ভব হবে না বলেও জানান রাজ্জাক।
“প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য যে হারে বিনিয়োগ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে এটাও সম্ভব নয়,” বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েতুল্লাহ মৃধা।
কমেন্ট