খাদ্য ও সড়ক নিরাপত্তায় ৮৬ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক
খাদ্য নিরাপত্তা ও সড়কের উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার ঋণ দেবে বিশ্ব ব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
বুধবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ সংক্রান্ত দুটি চুক্তি সই হয়। বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়েক সেক এবং সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব শরিফা খান চুক্তি দুটিতে সই করেন।
৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের মধ্যে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রেশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিল্যান্স-পিএআরটিএনইআর কর্মসূচির আওতায়।
এ কর্মসূচি দেশের টেকসই এবং পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থানে সহায়ক হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শস্যে বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষিতে রূপান্তর সহজ হবে।
সই হওয়া অন্য চুক্তিটি সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত। এ প্রকল্পে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পটি সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন এবং উচ্চ ঝুঁকির কয়েকটি সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কমাতে সহায়ক হবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের এটিই প্রথম কোনো প্রকল্প।
বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার)’ প্রকল্পটি মানসম্মত কৃষি কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
একই সঙ্গে জলবায়ু সহনশীল জাতের ও বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফসলের জাত উদ্ভাবন ও চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদনেও ভূমিকা রাখবে।
“এটি ডিজিটাল কৃষি সরঞ্জাম, খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়ন, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা বাড়ানোর মাধ্যমে উদ্যোক্তা ও পরিষেবাগুলোতে প্রবেশের সুযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে।”
পাশাপাশি তথ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাড়ানো এবং বৈশ্বিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশের কৃষি প্রতিষ্ঠান ও নীতি আধুনিকায়নে সহায়তা করবে।
অপর প্রকল্পের আওতায় সড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে, যেটিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রথম ‘ডেডিকেটেড রোড সেফটি প্রজেক্ট’বলা হচ্ছে।
এটির আওতায় দেশের বাছাই করা ঝূকিপূর্ণ মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলোতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও আহতের পরিমাণ কমিয়ে আনতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় দুটি জাতীয় মহাসড়ক এন-৪ (গাজীপুর-এলেঙ্গা) এবং এন-৬ (পাবনা-রাজশাহী) এ পরীক্ষামূলক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, সড়কে বিভিন্ন চিহ্ন ও প্রতীক বসানো, পথচারীদের সুবিধা, গতি আইন মেনে চলাচল ও জরুরি সেবার উন্নয়ন ঘটানো হবে।
এছাড়া সড়কে যানবাহন চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে চলাচলের নিয়ম মানাতে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতার আধুনিকায়ন ঘটানো হবে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবার জন্য টোল ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে। ওই দুটি জাতীয় মহাসড়ক সংলগ্ন নির্বাচিত জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন ঘটানো হবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়েক সেক বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কৃষিতে জরুরি কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন। সই হওয়া প্রকল্পটি এতে কিছুটা সহায়ক হবে। বাংলাদেশের সবুজ প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বিশ্বব্যাংক।”
ইআরডি সচিব শরিফা খান বলেন, বাংলাদেশের জন্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ সহায়তা। লক্ষ্য অর্জনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরে ৩০ বছর মেয়াদে এ দুই প্রকল্পে ঋণ দেবে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
ইআরডির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্ব ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৪১ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে; যা কোনো এক বছরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের সর্বোচ্চ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি।
কমেন্ট