ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি খরচ ভারতে
বিদেশ ভ্রমণে নগদ টাকার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ করার প্রবণতা বাড়ছে। এ প্রবণতায় বাংলাদেশিরাও বাইরে নন। ভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন ভারতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
কার্ডে খরচের প্রবণতা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথম একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, একক দেশ হিসেবে ভারতেই ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ করেন বাংলাদেশিরা। দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ করা হয় ভারতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ভ্রমণে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৭৩ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। মার্চে এই অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৩ কোটি টাকা।
অর্থ খরচের দিক থেকে ভারতের পর আছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছেন প্রায় ৫১ কোটি টাকা; থাইল্যান্ডে গিয়ে খরচ করেছেন ৪২ কোটি টাকা।
এরপর দুবাই ও সিঙ্গাপুরে যথাক্রমে ৪১ ও ৩৪ কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছেন। সব মিলিয়ে মার্চ মাসে দেশের বাইরে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছেন মোট ৪২৬ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, যেসব দেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন, সেসব দেশের মধ্যে আরও রয়েছে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া।
বিদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ভিসা কার্ড। এরপর ব্যবহৃত হয়েছে যথাক্রমে মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স কার্ড, ডাইনারস কার্ড, ইউনিয়ন পে ও জেসিবি কার্ড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, মার্চে বিদেশের সুপারশপে বাংলাদেশিরা ১৫৭ কোটি টাকার কেনাকাটা করেছেন। তারা ওষুধ কিনেছেন ৬১ কোটি টাকার, কাপড় কিনেছেন ৪৬ কোটি টাকার ও যাতায়াতে ব্যয় করেছেন ২৯ কোটি টাকা।
এই ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে আরও আছে নগদ টাকা উত্তোলন, ব্যবসা সেবা, পেশাগত সেবা ও সরকারি সেবা গ্রহণের মতো খাত।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কয়েক বছর ধরে বিদেশে ভ্রমণ বেড়েছে। কোভিডের কারণে মাঝে বন্ধই ছিল বলা যায়। এখন আগের মতোই মানুষজন ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশে যাচ্ছেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে নগদ টাকার বদলে কার্ডের ব্যবহার বেশি হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বাইরের দেশে এখন অনেকেই নগদ মুদ্রা ব্যবহার করতে চান না। ফলে আগের চেয়ে কার্ডের মাধ্যমে মুদ্রার লেনদেন বেড়ে গেছে।”
বাংলাদেশি একজন নাগরিক ভ্রমণের জন্য বছরে ১২ হাজার ডলার সঙ্গে নিতে পারেন। চিকিৎসার জন্য অনুমতি ছাড়া ১০ হাজার ডলার এবং শিক্ষার জন্য গ্রেড ১২-এর নিচে বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত লাগবে তত নিতে পারবেন।
বাংলাদেশে এসে বিদেশিদের খরচ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে আসা বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। সম্মিলিতভাবে বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশে কার্ডের মাধ্যমে যে পরিমাণ খরচ করেন এর এক-চতুর্থাংশের বেশি ব্যয় করেন মার্কিন নাগরিকরা। মার্চে তারা খরচ করেছেন ৬১ কোটি টাকার বেশি।
কার্ডের মাধ্যমে ব্যয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা। তারা মার্চে ব্যয় করেছেন ২৮ কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে ভারতের নাগরিকরা ব্যয় করেছেন প্রায় ২৫ কোটি টাকা। সিঙ্গাপুর, চীন, কানাডা, জাপান, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা বাংলাদেশে ব্যয় করার দিক থেকে তালিকায় ওপরের দিকে আছেন।
বিদেশি নাগরিকরা মার্চ মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে মোট খরচ করেছেন ২৩৭ কোটি টাকা, এর আগের মাসের তুলনায় যা ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
কমেন্ট