বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির অর্ধশতাধিক মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
সোমবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে সংস্থাটির সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির অভিযোগে ৫৯টি মামলায় ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে কমিশন। এদের মধ্যে বাচ্চুসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা ৪৬ জন। আর গ্রাহক ১০১ জন।
এক যুগেরও বেশি সময় আগে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোপাটের অভিযোগ ওঠে। এই বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
অভিযোগটি অনুসন্ধান করে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এসব মামলায়। বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ ২৭ কর্মকর্তা, ১১ জরিপকারী ও ৮২ ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
পরে আরও কয়েকটি মামলা করে সংস্থাটি।
বহুল আলোচিত ওই জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ প্রতিবেদনে বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসে।
তখনকার অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত নিজেই বেসিক ব্যাংকে ‘হরিলুটের’ পেছনে আবদুল হাই বাচ্চু জড়িত বলে উল্লেখ করেন। জাতীয় সংসদেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংসদীয় কমিটিতেও এ জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কমিটির সদস্যরা।
অথচ ওই ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। অনুসন্ধানকালে তাকে কখনো দুদকে ডাকাই হয়নি। আদালতের একটি আদেশের পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তাকে প্রথমবারের মতো তলব করে দুদক। এর ধারাবাহিকতায় তাকেসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
দুদক আইনে প্রতিটি মামলার তদন্ত সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও তদন্তের ব্যাপকতা ও জটিলতা বিবেচনায় বাড়তি সময় দেওয়ার রীতিও রয়েছে। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের এই অর্ধশতাধিক মামলার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পরও পেরিয়ে গেছে বহু বছর।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর এ সংক্রান্ত এক রুল খারিজ করে হাইকোর্ট তিন মাসের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষ করে দুদককে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা মেনে বেসিক ব্যাংকের মামলার তদন্ত যাতে নির্ধারিত তিন মাসের মধ্যে শেষ করা হয়, সে লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে।
কমেন্ট