সিমেন্ট: ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক ২০০ টাকা করার দাবি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিসিএমএ’র সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর কবির। ছবি: সংগৃহীত
সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার-এর আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে এই খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিসিএমএ।
সংগঠনটি প্রতি টন ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক ২০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। বর্তমানে প্রতি টন ক্লিংকারের জন্য ৫০০ টাকা শুল্ক দিতে হয়। নতুন বাজেটে এই শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে ৭০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বিসিএমএ’র সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এই দাবি করেছেন। বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আলমগীর কবির বলেন, “সিমেন্ট খাতের বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর (এআইটি), বিদ্যুৎ সংকট, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার জটিলতা ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যার কারণে সিমেন্ট শিল্প বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে। এর মধ্যে ক্লিংকারের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলে তা দেশের উদীয়মান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম সিমেন্ট শিল্পের সব সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “যে কোনো শিল্পের প্রধান কাঁচামাল আমদানিতে আমদানি মূল্যের উপর প্রায় ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কিন্তু ক্লিংকারে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক থাকায় বাস্তবে শুল্ক দিতে হচ্ছে ৭/৮ শতাংশ হারে। আর বাজেট প্রস্তাবনা অনুসারে প্রতি টনের ৭০০ টাকা শুল্ক দিতে হলে কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াবে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ। যা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শিল্পবান্ধব নয়।”
আলমগীর জানান, প্রস্তাবিত শুল্কহার কার্যকর হলে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের দাম কমপক্ষে ১৫/১৬ টাকা বেড়ে যাবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সিমেন্টের বাজারে ভোক্তা সাধারণের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সার্বিকভাবে নির্মাণ কার্যক্রমে গতি হারানোর উপক্রম হতে পারে।
“আমরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছি যে, আমদানি পর্যায়ে এআইটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য্য করা যেতে পারে, কিন্তু এআইটি কে কোনক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাই উক্ত এআইটিকে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি।”
“আমদানি পর্যায়ে ছাড়াও বর্তমানে বিক্রয় পর্যায়েও ২ শতাংশ হারে এআইটি ধার্য করা হচ্ছে এবং এআইটি কে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন যাবত দাবি করে আসছে যে, বিক্রয় পর্যায়েও এআইটি প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০ শতাংশ ৫০ শতাংশ ধার্য করা যেতে পারে, কিন্তু এআইটিকে কোনভাবে চূড়ান্ত দায় হিসাবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না।
“তাই এক্ষেত্রেও উক্ত এআইটিকে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। তাছড়া সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা যেহেতু আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের উপর এআইটি ইতিমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, বিক্রম পর্যায়ের এআইটি প্রদান করা, ‘দ্বৈত কর’ এর শামিল।
তিনি বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রাক-বাজেট আলোচনায় আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এই বিষয়টি পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করেছিলাম। এনবিআর তখন আশ্বাস দিয়েছিলো যে, এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সেই আশ্বাসের কোন প্রতিফলন ঘটেনি।”
আলমগীর কবির বলেন, “ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি বিঘ্ন হচ্ছে এবং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে এলসি খুলতে গিয়ে বিরাট বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বিঘ্ন হচ্ছে। একইসঙ্গে গ্যাস সংকটের কারণেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি তেলের নাম বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের স্থানীয় পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সিমেন্ট রপ্তানির উপর নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকাতেও এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।”
“বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি এই খাতটিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে এবং ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়, তাহলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের এই দুরাবস্থা কিছুটা হলেও কমবে এবং দেশের সিমেন্ট শিল্প খাত সুরক্ষিত হবে।
“সিমেন্ট শিল্প একটি উদীয়মান আমদানি বিকল্প শিল্প খাত। দেশের আবাসন সমস্যা সমাধান, অবকাঠামো উন্নয়নসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে এই শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সিমেন্ট খাত দেশের রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং কমসংস্থানেও এই খাতের বিশেষ অবদান রয়েছে।”
“তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে থেকে আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার-এর আমদানি শুল্ক প্রতি মেট্রিক টনে ৭০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা করা হোক ।”
কমেন্ট