বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বিশ্ব ব্যাংক

বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বিশ্ব ব্যাংক

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক।

ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার দুই দিনের ঢাকা শেষে মঙ্গলবার এই আশার কথা শুনিয়েছেন।

রাইজার বলেন, “বাংলাদেশ ক্রমাগত বৈশ্বিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই চাপ মোকাবিলার জন্য সতর্ক সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ করতে হবে। কর্মমসংস্থান বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করতে কাঠামোগত সংস্কারের দিকেও আরও বেশি জোর দিতে হবে।”

“আর এ সবের জন্য বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে অতীতের মত। বাংলাদেশের জন্য আমরা যে নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক (সিপিএফ) হাতে নিয়েছি, তার মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক তার সহায়তা ও সমর্থন দ্বিগুণ করতে প্রস্তুত।”

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অব্যাহত সহায়তার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করেন রাইজার।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সফরের অংশ হিসেবে রাইজার এবার ঢাকায় আসেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগসহ (ইআরডি) সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের নতুন কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের  (সিপিএফ) পাশাপাশি সংস্থাটির সহায়তা কীভাবে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহায়তা করতে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

রাইজার বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

১৯ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণের চুক্তি

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিতদের চাহিদাভিত্তিক দক্ষতা বাড়ানোর একটি প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী (১ ডলারে ১০৮ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২ হাজার ৬২ কোটি টাকা।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইআরডি জানিয়েছে, এই ঋণের জন্য ০.৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ এবং ১.২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। ৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে ইআরডি সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব শরিফা খান এবং বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজারও উপস্থিত ছিলেন এই অনুষ্ঠানে।

ইআরডি জানায়, ‘হায়ার এডুকেশন একসেলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন’শীর্ষক প্রকল্পের জন্য এই ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। 

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই প্রকল্পটি আগামী ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।

দেশের উচ্চ শিক্ষিতদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

বাজার চাহিদা ভিত্তিক শিক্ষা কোর্স প্রবর্তন, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়া প্রকল্পটির মাধ্যমে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জন্য অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে।

বিশ্ব ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ৩৬০ কোটি ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি এক বছরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সর্বোচ্চ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি।

এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গড়ার আহ্বান

এদিকে এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার।

মঙ্গলবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।

এ সময় বিশ্ব ব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রস বর্ডার ট্রেড, আঞ্চলিক পাওয়ার পুল, দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক পাওয়ার মার্কেট, নেপাল ও ভূটান হতে বিদ্যুৎ আমদানি ও ই-মবিলিটি নিয়ে আলোচনা করেন। এ বিষয়ে আঞ্চলিক জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি খাতের প্রকল্পের ওপর আলোকপাত করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জ্বালানি সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নূরুল আলম, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলাই শেক, অপারেশন ম্যানেজার দানদান চেন ও অপারেশন অ্যাডভাইজার গেইল মার্টিন উপস্থিত ছিলেন।

 

আইএমএফের শর্ত পূরণের মুদ্রানীতি আসছে রোববার

পরবর্তী

আইএমএফের শর্ত পূরণের মুদ্রানীতি আসছে রোববার

কমেন্ট