ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে সফট ব্যাংককে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক
বহুল আলোচিত ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতেই আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই ব্যাংকিংয়ে জাপানের বহুজাতিক শিল্পগোষ্ঠী সফট ব্যাংক গ্রুপকে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে সফট ব্যাংক এগিয়ে আসবে। আর সারা বিশ্বেই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক ও সেবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এই ব্যাংক বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করলে বা অংশীদার হিসেবে কারো সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করলে ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়বে; দ্রুত বিকশিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে খুব শিগগিরই আবেদন আহ্বান করা হবে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে।
গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাগুজে নথি জমা দিয়ে নয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতেই ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র ডিজিটাল উপায়েই জমা দিতে হবে। আবেদন ফি হবে পাঁচ লাখ টাকা, যা অফেরতযোগ্য। আর এই ব্যাংক খুলতে ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা।
নতুন এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইছে, বিদেশি কোনো ডিজিটাল ব্যাংক তথা সফট ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসুক। কারণ, তাদের উচ্চ প্রযুক্তি, নিরাপত্তাব্যবস্থা, অভিজ্ঞতা ও বিনিয়োগ সবই রয়েছে।
তারা এ দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে থাকলে গ্রাহকেরাও আস্থা পাবেন, তাদের আমানতও সুরক্ষিত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পর্যালোচনা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা চূড়ান্ত করার পর বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এতে নীতিমালার পাশাপাশি আবেদনের যাবতীয় ছক দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, এই ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী চলবে এই ব্যাংক।
জানতে জাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল বশর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যেই অনেকেই এ বিষয়ে যোগাযোগ করছেন। তদবির এড়াতে ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদন ডিজিটাল পদ্ধতিতে আহ্বান করা হবে। এই ব্যাংকের অনুমোদন দিতে খুব শিগগিরই আবেদন আহ্বান করা হবে।”
“বাংলাদেশ ব্যাংক চাইছে, সফট ব্যাংকের মতো বিদেশি ব্যাংক এ দেশে আসুক। কারণ, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা ছাড়া এই ব্যাংক ভালোভাবে চালানো কঠিন হবে। প্রচলিত ব্যাংকের মতো এসব ব্যাংক চলুক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা চায় না।”
সম্ভাবনা আছে—তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক এমন কোনো ব্যবসা পেলেই বিনিয়োগ করছে সফট ব্যাংক। তহবিলের অভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এগোতে পারছে না, সেগুলোতেও ঢুকে পড়ছে সফট ব্যাংক। এই ব্যাংক এত দিন ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে নজর দিলেও এখন প্রতিবেশী ভারতেও বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যদিও ভারতে আগে থেকেই বড় বিনিয়োগ আছে গ্রুপটির।
উবার, আলিবাবা, ওলা, ইয়াহু জাপান করপোরেশন—কে নেই গোষ্ঠীটির বিনিয়োগের তালিকায়। বিনিয়োগ করতে গঠন করেছে আলাদা তহবিলও। সফট ব্যাংকের ভিশন ফান্ড বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তিভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড, যার পুঁজি ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
নামের সঙ্গে ব্যাংক থাকলেও আসলে এটা বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়। তবে জাপানের ব্যাংকে তাদের বিনিয়োগ আছে। আর সারা বিশ্বেই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক ও সেবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সফট ব্যাংক।
বাংলাদেশেও সফট ব্যাংকের বিনিয়োগ আছে। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশের ২০ শতাংশ শেয়ার সফট ব্যাংকের। বাংলাদেশে ব্যাংকটির এটিই প্রথম বিনিয়োগ।
ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মূলধন সংরক্ষণ চুক্তি করতে হবে। কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়লে তা উদ্যোক্তাদের জোগান দিতে হবে। ঋণখেলাপি কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না।
এমনকি ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কারও বিরুদ্ধে ঋণখেলাপিসংক্রান্ত কোনো মামলা আদালতে চলমান থাকলে তারাও আবেদন করার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
ঋণ বা ধার করা অর্থ দিয়ে কেউ ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানায় আসতে পারবেন না।
কমেন্ট