নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে লাগবে ৫০০ কোটি টাকা

নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে লাগবে ৫০০ কোটি টাকা

রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন। ফাইল ছবি

নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে পরিশোধিত মূলধনের অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক কোম্পানি আইনে দেওয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার এই সীমা নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করেছে।

আগের নিয়মে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ছিল ৪০০ কোটি টাকা। তবে গত ৩ বছরে যেসব ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উত্তীর্ণ করার শর্ত বেঁধে দিয়েছিল।

আগের প্রায় সব ব্যাংক মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারে বলা হয়েছে, “ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৩ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শাখাভিত্তিক কার্যরত ব্যাংক-কোম্পানিসহ যেকোনো নতুন ব্যাংক-কোম্পানি স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করল।”

“এ ছাড়া শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করল।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত বুধবার ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের নীতিমালা অনুমোদন করে। বৃহস্পতিবার সেই নীতিমালা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক সময়ে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫০ লাখ টাকা। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ হওয়ার পর পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

২০০৩ সালের মার্চে তা আরও বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা, ২০০৭ সালে তা ২০০ কোটি টাকা, ২০১১ সালে তা দ্বিগুণ করে ৪০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে পরিশোধিত মূলধন আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে।

স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়া হয়ে ১৯৮৩ সালে। এরপর ১৯৯৫ ও ২০০১ সালে বেসরকারি খাতে আরও কিছু ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০১৩ সালে লাইসেন্স পায় ৯টি ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের প্রায় সবগুলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে পুরোপুরি দাঁড়াতে পারেনি। সব মিলিয়ে ২০০৮ থেকে তিন দফায় ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়।

সবশেষ ২০২১ সালে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক লাইসেন্স পাওয়ায় দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা এখন ৬১টি।

অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, অর্থনৈতিক পরিসরের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি।

ব্যাংকিং খাতে প্রধান সমস্যা এখন খেলাপি ঋণ। সরকারি ব্যাংক ও খেলাপি ঋণ একসময় একসূত্রে গাঁথা ছিল। এই প্রবণতা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বেসরকারি ব্যাংকেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত মার্চ শেষে দেশে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি।

এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হিসাব দেয়, তার তুলনায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ অনেক বেশি বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। তাদের হিসাবে খেলাপি ঋণ হবে ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

আইএমএফ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি দেখানোর পক্ষে।

 

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে সফট ব্যাংককে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে সফট ব্যাংককে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

কমেন্ট