ডলারের এক দর জুলাইয়ে হচ্ছে না

ডলারের এক দর জুলাইয়ে হচ্ছে না

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম হবে—ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হচ্ছে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের বিভিন্ন দাম থাকবে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর ডলারের এক দাম কার্যকর করতে চায় ব্যাংকগুলো।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সোমবার এক অনলাইন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এতে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডলারের একাধিক দাম থাকবে, এটা মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে। এ জন্য রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। অন্য ক্ষেত্রে দাম আগের মতো থাকবে।”

গত ২২ মে এবিবির এক সংবাদ সম্মেলনে সেলিম আর এফ হোসেন জানিয়েছিলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে দেশে ডলারের একক দাম চালু হতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে বলেছে, এবিবি ও বাফেদা সেপ্টেম্বরের আগ পর্যন্ত রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের পৃথক দাম মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের এক দাম কার্যকরের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ডলারের এক দাম বলতে কেনা ও বেচায় এক দাম নয়, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কেনায় এক দাম। অর্থাৎ রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে যত টাকা দেওয়া হবে রপ্তানিকারকেরাও প্রতি ডলারে ঠিক একই দাম পাবেন। তবে আমদানি দায় পরিশোধে ডলার বিক্রিতে আলাদা দাম থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত বছরের জুলাইয়ে যোগ দেওয়ার পর বলেছিলেন, জানুয়ারি থেকে ডলার–সংকট থাকবে না। এরপর আর সংকট কাটার সময়সীমা উল্লেখ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান।

আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও ডলার–সংকট কাটছে না। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বিদেশি ব্যাংকগুলোর দায় পরিশোধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তা দিতে পারছে না অনেক ব্যাংক।

রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়ল

রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সোমবার বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ডলারের নতুন দাম পরবর্তী কর্মদিবসে কার্যকর হবে। ফলে প্রতি ডলারে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন রপ্তানিকারকেরা। প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দর বর্তমান দর ১০৮ টাকা ৫০ পয়সাই থাকবে।

এ ছাড়া ডলারের আন্তব্যাংক দর হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা। ফলে আমদানিতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এখনও ১০৬ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। সোমবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত থেকে ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ২৬ জুন) রিজার্ভ থেকে মোট ১ হাজার ৩৫৮ কোটি (১৩.৫৮ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

সোমবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১১৫ কোটি (৩১.১৫ বিলিয়ন) ডলার। এদিকে ব্যাংকগুলোয় ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। ফলে সোমবার আন্তব্যাংকে ১০৮ -১০৮.৮৪ টাকা দরে ১২ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরের মাস মার্চ থেকেই দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। কয়েক মাস পর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়।

এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে সংগঠন দুটি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত জানুয়ারিতে যেসব শর্তে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে তার অন্যতম একটি হলো, সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম নির্ধারণ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন বলেন, “ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ বাড়ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দামের ব্যবধানও কমে আসছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচা করছে। এটা বাজার স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।”

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে কাপড় কেনাকাটা কমেছে ৩০%

পরবর্তী

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে কাপড় কেনাকাটা কমেছে ৩০%

কমেন্ট