কৃষিঋণ বিতরণে রেকর্ড

কৃষিঋণ বিতরণে রেকর্ড

২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে কৃষি খাতে ২৯ হাজার ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। ফাইল ছবি

৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ২৯ হাজার ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। 

এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। আর পুরো সময়ের (১২ মাস, জুলাই-জুন) চেয়েও ১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও কোনো অর্থবছরে কৃষি খাতে এত বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়নি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে কৃষি খাতে ২৯ হাজার ২৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ। 

গত বছর একই সময়ে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। 

২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।সে হিসাবে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৫১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা বিতরণ করলেই নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জিত হবে। 

একক মাসের হিসাবে গত মে মাসে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি ২১ লাখ টাকা বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। আগের মাস এপ্রিলে করেছিল ২ হাজার ৮০৭ কোটি ৬ লাখ টাকা।   

কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংক খাতের সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হলেও পিছিয়ে আছে বেশ কয়েকটি  ব্যাংক। এর মধ্যে কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি; আবার কিছু ব্যাংকের অবস্থা একেবারেই নাজুক। 

২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। বিতরণ করা হয়েছিল লক্ষ্যের বেশি ২৮ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। 

কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলেছেন, দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রায় দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় তছনছ হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশার কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেলসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। খাদ্যপণ্য আমদানির চেয়ে দেশে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে সরকার বেশি নজর দিয়েছে। সে কারণে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে। এ কারণে ঋণের প্রবৃদ্ধি ভালো; পুরো অর্থবছরের তথ্য পাওয়া গেলে দেখা যাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।  

কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, মোট ঋণের কমপক্ষে ২ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। এর ফলে বাড়ছে ঋণ বিতরণ। এর সঙ্গে কৃষিঋণ বিতরণের অংশও বাড়ছে। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলো বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে বিতরণ করেছে ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। পুরো অর্থবছরে এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ খাতের ব্যাংকঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। 

আবার ৪৮ বেসরকারি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৭ হাজার ৫২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যদিও এসব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। 

আবার লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকও রয়েছে। সবচেয়ে কম কৃষিঋণ বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক। ব্যাংকটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে সর্বোচ্চ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমাণ ২ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২২  হাজার ৭৪৯ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। 

কৃষি অর্থনীতিবিদ ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম খান এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “এই যে আমাদের দেশে বোরো-আমন ধানসহ সব ধরনের কৃষি উৎপাদন বাড়ছে, তাতে এই কৃষিঋণের অবদান রয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকির কারণে কৃষকরা সময় মত ঋণ পাচ্ছে, সার-বীজসহ অন্যান্য উপকরণ কিনছেন। উৎপাদন বাড়াচ্ছেন।” 

‘দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে’ দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই আহ্বান দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অবদান রেখেছে বলে জানান তিনি। 

ছয় মাস ব্যাংক ঋণের সুদ ১০.১০  শতাংশ পরবর্তী

ছয় মাস ব্যাংক ঋণের সুদ ১০.১০ শতাংশ

কমেন্ট