সেপ্টেম্বরে চালু হবে টাকা-রুপি কার্ড: গভর্নর
বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতীয় মুদ্রা রুপির ব্যবহারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
আগামী সেপ্টেম্বর থেকে চালু হচ্ছে ‘টাকা-রুপি কার্ড’। বাংলাদেশ ব্যাংক এই দুই মুদ্রার কার্ড চালু করবে।
প্রতিবেশি দুই দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতীয় মুদ্রা রুপির ব্যবহারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই ঘোষণা দিয়েছেন।
রাজধানীর লা মেরেডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশনের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠান হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “টাকা–রুপিতে আমরা ডুয়েল কারেন্সি কার্ড চালুর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। সেপ্টেম্বরে এটি চালু করা যাবে।”
ডলার সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে এই কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তারা মার্কিন ডলার নিয়ে যান। ভারতে যাওয়ার পর সেই ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করে খরচ করতে হয়। নতুন কার্ড চালু হলে দুবার মুদ্রা বিনিময় আর করতে হবে না।
কার্ড ব্যবহার করলে বিনিময় হারের খরচ কিছুটা বাঁচবে। এ কার্ড দেশে যেমন ব্যবহার করা যাবে, তেমনই ভারতে গিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
গত ১৮ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রথমার্ধের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর প্রথম টাকা–রুপি কার্ডের কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
গভর্নর বলেছিলেন, “আমরা টাকার একটি টাকা পে-কার্ড চালু করছি। এটাকে ভারতের রুপির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেব। এ কার্ড থাকলে গ্রাহকেরা বাংলাদেশে এটিকে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেকোনো কেনাকাটা করতে পারবেন। আবার যখন ভারতে যাবেন, তখনো এ কার্ড দিয়েই ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন।”
রউফ তালুকদার আরও বলেছিলেন, “চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেকে ভারতে যান। এ জন্য মার্কিন ডলার কিনে ভারতে গিয়ে রুপিতে রূপান্তর করতে হয়। এতে ভ্রমণকারীকে প্রায়ই বিনিময় হারজনিত লোকসানে পড়তে হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ‘টাকা পে’ নামে ডেবিট কার্ড চালু করা হবে।”
“আমরা টাকার একটি পে-কার্ড চালু করছি। এটাকে ভারতের রুপির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেবো। এ কার্ড থাকলে গ্রাহকরা বাংলাদেশে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যে কোনো কেনাকাটা করতে পারবেন।
“আবার যখন ভারতে যাবেন তখনও এই কার্ড দিয়েই ভ্রমণ কোটায় ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন। ফলে দুইবার মানি চেঞ্জে যে লস (লোকসান) হচ্ছে, তা আর হবে না। অর্থাৎ ভ্রমণে যেতে হলে প্রথমে টাকা থেকে ডলারে কনভার্ট করতে হয়, পরে ভারতে গিয়ে ডলার রুপিতে কনভার্ট করতে হয়। টাকা পে-কার্ড নিলে দুইবার মানি চেঞ্জ করতে হবে না।
“এতে করে কমপক্ষে ৬ শতাংশের মতো খরচ কমবে। ভারতে প্রতি বছর অনেক বাংলাদেশি পর্যটক ঘুরতে যান। চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্যও যান অনেকে। এতে আমাদের অনেক ডলার বেঁচে যাবে।”
গভর্নর বলেছিলেন, “ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই কার্ড ইস্যু করবে। এই কার্ডে সরাসরি রুপি নিয়ে ভারতে গিয়ে খরচ করা যাবে। এতে করে আর বিনিময় হারজনিত লোকসান হবে না। এই ডেবিট কার্ডধারীরা ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পেমেন্ট করতে পারবেন।”
“এটা কারেন্সি সোয়াপ হবে না। কারণ কারেন্সি সোয়াপ হলো এক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে ডলার ধার করে। এখানে গ্রাহক লেনদেন করবে।”
আন্তর্জাতিক এক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, যেসব দেশ থেকে বেশি সংখ্যায় পর্যটক ভারতে গেছেন, তার শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৭ জন বাংলাদেশী পর্যটক ভিসায় ভারতে গেছেন।
মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন অবশ্য গভর্নর বলেছিলেন আগস্টে এই কার্ড চালু করা হতে পারে।
কমেন্ট