ভারতের আগ্রহেই রুপিতে বাণিজ্য শুরু: বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। ফাইল ছবি
ভারতের আগ্রহেই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেছেন, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। আরও ১৮টি দেশ রুপিতে বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশ ১৯তম দেশ হিসেবে এটা শুরু করল।
মঙ্গলবার দুুপুরে রাজধানীর লা মেরেডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতীয় রুপি ব্যবহারের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
এরপর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। অনুষ্ঠানে সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেজবাউল হক বলেন, “আজ সকালে একটি আমদানি ও রপ্তানি ঋণপত্র খোলার মাধ্যমে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এর লেনদেন সম্পন্ন হবে শুধু রুপিতে। ভারত থেকে আমরা ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করি, রপ্তানি করি ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।”
“আমরা যে পরিমাণ রপ্তানি আয় করব, শুধু সে পরিমাণ পণ্য আমদানি রুপিতে হবে। বাকি আমদানি কার্যক্রম আগের মতোই ডলারে চলবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন, “এখন শুধু রুপিতে এই সেবা চালু হলো। এতে খরচ কিছুটা কমে আসবে। ভবিষ্যতে টাকায়ও এই সেবা মিলবে। ডলারের পাশাপাশি রুপিতে বাণিজ্য শুরুর মাধ্যমে আমাদের নতুন একটি দ্বার খুলল।
“আপাতত দেশে কাজ করে এমন তিন ব্যাংক এই সেবায় যুক্ত হলেও পরে অন্য ব্যাংকগুলো এ সেবা দিতে পারবে।”
মেজবাউল হক বলেন, ভারতের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের নিজস্ব মুদ্রায় প্রবাসী আয় গ্রহণের সেবা আছে। গালফ দেশগুলোয়ও নিজস্ব মুদ্রায় এমন সেবা চালু আছে।
রুপির জন্যও ব্যবহার করা যাবে এমন কার্ড কবে চালু হবে—এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “আমরা একটা ডেবিট কার্ড চালু করতে যাচ্ছি। প্রথমে এই কার্ডে টাকায় লেনদেন করা যাবে। পরে রুপি ব্যবহারের সুবিধা চালু হবে। ধীরে ধীরে অন্য দেশেও ব্যবহার উপযোগী করা যায় কি না, তা পর্যালোচনা করা হবে।”
২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এলসি
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দুই দেশের দুই প্রতিষ্ঠান রুপিতে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে। বগুড়ার কোম্পানি তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় রুপির পণ্য কেনার জন্য ভারতীয় আমদানিকারকের এলসি (ঋণপত্র) খোলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রথম লেনদেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ঢাকা শাখার মাধ্যমে এ রপ্তানি করা হয়। ভারতের আমদানিকারক ঋণপত্র ( এলসি) খোলেন দেশটির আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রুপিতে প্রথম আমদানির এলসি খোলে নিটা কোম্পানি। এসবিআই ঢাকা শাখার মাধ্যমে তারা এক কোটি ২০ লাখ রুপির পণ্য আমদানির আদেশ দেয়। এসবিআই এর মুম্বাই শাখা পণ্য আমদানিতে ভারতে প্রতিনিধি ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে।
প্রথম আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি হিসেবে কোম্পানিগুলোর মালিকদের অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় স্মারক উপহার।
বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন সহজ করতে এবং ব্যয় সাশ্রয়ে বিকল্প মুদ্রা চালুর উদ্যোগ নিতে গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলে। সেই ধারাবাহিকতায় সীমিত পরিসরে রুপিতে লেনদেন শুরু হলো।
এর ফলে উভয় দেশের উদ্যোক্তাদের বাণিজ্য খরচ কমে আসার পাশাপাশি ডলার নির্ভরতাও কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছেন ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
শুরুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও আইসিআইসিআই ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তিতে অংশ নিচ্ছে।
কমেন্ট