মে মাসে মোবাইলে লেনদেন কমেছে

মে মাসে মোবাইলে লেনদেন কমেছে

মে মাসে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ফাইল ছবি

গত মে মাসে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএসের মাধ্যমে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। 

এপ্রিল মাসে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি। 

রোজা ও ঈদের কারণে এপ্রিলে লেনদেনে রেকর্ড হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এমএফএস প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, প্রতি বছরই দুই ঈদের মাসে মোবাইলে অর্থ লেনদেন বাড়ে। ২৯ জুন দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়েছে। সে হিসাবে জুন মাসের তথ্য পাওয়া গেলে দেখা যাবে ওই মাসেও লেনদেন বেড়েছে। 

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেয়া হয়েছে। 

তথ্যে দেখা যায়,  চলতি বছরের মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। শতাংশ হিসাবে এটি আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ কম।  এপ্রিলে লেনদেন হয়েছিল প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে প্রায় সাড়ে ২০  কোটিতে পৌঁছেছে। 

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের মে মাস শেষে এমএফএসে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার। 

এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২১০ জন। এ ছাড়া ‘নগদ’-এ রয়েছে সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক। এ হিসাব যোগ করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছাড়াবে সাড়ে ২৬ কোটি। 

এর কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছেন। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমের হিসাব খুলছেন গ্রাহকরা। 

এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহক-সম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। ফলে গ্রাহক ঝামেলা মুক্তভাবে হিসাব খুলতে পারছেন।

বিভিন্ন সেবা 

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। 

এ ছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এক কথায় বলা যায়, ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। সব লেনদেন এখন নিমিষেই। 

এই সেবার কারণে বেড়েছে নতুন কর্মসংস্থান। সবকিছু চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। সময় বেঁচেছে এবং ঝুঁকিও কমেছে। মোবাইল ব্যাংকিং এখন শুধু টাকা-পয়সা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানোর কাজেই সীমাবদ্ধ নেই। গ্রাহকদের জন্য প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসছে তারা। 

এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম, ইন্স্যুরেন্সের টাকা, বিভিন্ন ধরনের বিল এবং পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে। 

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। 

পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৩টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের সেবা নগদও দিচ্ছে এই সেবা। 

এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের লেনদেনে। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম। 

আর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টদের কাছেও যেতে হচ্ছে না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এসব হিসাবে।

আবার এসব হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা শুরু হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেয়া যাচ্ছে। এর ফলে একটি মুঠোফোনই যেন একেকজনের কাছে নিজের ব্যাংক হয়ে উঠেছে। 

এমএফএস লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, ‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মোবাইল আর্থিক সেবা দেশের মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনকে প্রযুক্তিনির্ভর করে সহজ, নিরাপদ এবং তাৎক্ষণিক করেছে।” 

“সামগ্রিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের ওপর যার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্যাশলেস সমাজ নির্মাণেও এই খাত ভূমিকা রাখবে,” বলেন বিকাশ প্রধান। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এখন এমএফএস। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে এই সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সেবার ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে। ফলে বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে ৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি পরবর্তী

বাংলাদেশ ব্যাংকে ৮ কর্মকর্তার পদোন্নতি

কমেন্ট