বাংলাদেশের ঋণমান ‘নেতিবাচক’: এসঅ্যান্ডপি

বাংলাদেশের ঋণমান ‘নেতিবাচক’: এসঅ্যান্ডপি

বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের যে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে, তার অবস্থা আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে; সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে আছে—মূলত এ দুই কারণে বাংলাদেশবিষয়ক পূর্বাভাস হ্রাস করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।

আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স এর পর আরেকটি ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর আভাস দিয়েছে।

সংস্থাটি বাংলাদেশের ঋণমান ‘স্থিতিশীল’ থেকে 'নেতিবাচক' অবস্থানে নামিয়ে এনেছে।

এসঅ্যান্ডপি’র রেটিংয়ে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশ এত দিন ছিল স্থিতিশীল। কিন্তু এখন তারা তা কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘নেতিবাচক’ ঋণমান নির্ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সার্বভৌম ঋণমান দীর্ঘ মেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্প মেয়াদে ‘বি’ নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। 

বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের যে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে, তার অবস্থা আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে; সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে আছে—মূলত এ দুই কারণে বাংলাদেশবিষয়ক পূর্বাভাস হ্রাস করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। 

ঋণমান নির্ণয়কারী শীর্ষস্থানীয় এই আন্তর্জাতিক সংস্থা মনে করছে, আগামী ৩ বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার দাঁড়াতে পারে ৬ থেকে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। তাদের হিসাব, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। 

এসঅ্যান্ডপি আরও বলেছে, “বাংলাদেশের নিট বিদেশি ঋণ ও তারল্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ঋণমান আরও হ্রাস করা হতে পারে। বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের নিট বিদেশি ঋণ যদি চলতি হিসাবের ভারসাম্যের চেয়ে বেশি হয় বা মোট বিদেশি অর্থায়নের চাহিদা চলতি হিসাবে প্রাপ্য স্থিতি ও ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বাংলাদেশের ঋণমান আরও কমানো হতে পারে।” 

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, বাহ্যিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে দেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। 

এসঅ্যান্ডপি’র রেটিং নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডলার ঘাটতির কারণে আমদানি করা জ্বালানির অর্থ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ডলারের মজুত এক তৃতীয়াংশেরও বেশি কমে গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। 

এসঅ্যান্ডপি বলছে, আগামী ১২ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের বহিস্থ খাতের স্থিতিশীলতার জন্য অনুকূল বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ প্রয়োজন। 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। 

এদিকে চলতি বছরের ৩১ মে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর কথা ঘোষণা করে। তখন প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখন ব্যাপক দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি আছে; একই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও প্রতিভাত হচ্ছে। এ কারণে মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামিয়েছে। 

মুডিস আরও বলে, পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হলেও বাংলাদেশে ডলার-সংকট চলমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমে যাচ্ছে, যার কারণে দেশের বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত আছে। 

মুডি’স ঋণমান আমলে নেননি গভর্নর

তবে মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমালেও সেটাকে আমলে নেননি   বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সে সময় তিনি বলেছিলেন, “এই রেটিং কমানোর বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু আসে যায় না। এটা করার পেছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।” 

গত ১৮ জুন ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

গত ৩০ মে ছয় মাস আগে শুরু করা পর্যালোচনার তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়; আগের বিএ৩ থেকে কমিয়ে বি১ করা হয়েছে।

রেটিং সংস্থাটির মূল্যায়ন অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেন ও তারল্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচ্চমাত্রার ঝুঁকি রয়েছে। এরসঙ্গে চলমান সংকটকালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও দেখা গেছে। যে কারণে সর্বভৌম ঋণমানের রেটিং কমিয়ে বি১ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে গভর্নরের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এর আগে মুডি’স যে রেটিং দিয়েছিল, সেটা ২০১২ সালের দিকে। সে সময় আমাদের অর্থনীতি যেমন ছিল, তার চেয়ে এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে। ইতোমধ্যে আমাদের ডলারের রিজার্ভ বা মজুত ৪৮ বিলিয়নেও উঠেছিল। মাথাপিছু আয়ও গত কয়েক বছরে বেড়েছে। কিন্তু তখন তারা আমাদের রেটিং বাড়ায়নি।” 

“যেসব কারণে এখন রেটিং কমানো হয়েছে, তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। যেটা করা হয়েছে সেটাকে পিওর ইকোনমিক রিপোর্টিং বলা যাবে না। এটা ভূরাজনৈতিক কারণে হয়েছে। 

“আমাদের রেটিং কমানোর মতো কিছু হয়নি। এখন দেশের অর্থনীতিতে ডলারের সংকট ও রিজার্ভের সমস্যা ছাড়া বড় কোনো সমস্যা নেই। এ ছাড়া অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ভালো আছে।” 

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয়ে আরও ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হলেও তিনি ‘এই ব্যাপারে আর বিস্তারিত না বলাই ভালো’ বলে মন্তব্য করেন।

ব্যাংকের সংখ্যা অর্ধেক করার পরামর্শ আইএফএসি কান্ট্রি ম্যানেজারের পরবর্তী

ব্যাংকের সংখ্যা অর্ধেক করার পরামর্শ আইএফএসি কান্ট্রি ম্যানেজারের

কমেন্ট