ব্যাংকে এক পরিবার থেকে পরিচালকের সংখ্যা তিনে নামাতে নির্দেশ
বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এক পরিবার থেকে পরিচালকসংখ্যা তিনজনে নামিয়ে এনে বিষয়টি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে অবহিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে। ফাইল ছবি
কোনো ব্যাংকে এক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি পরিচালক থাকলে বাকিদের পদত্যাগ করতে হবে। তবে কে পদত্যাগ করবেন, সেই বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধন ১৯৯৮)-এর ১৫ (১০) ধারা অনুযায়ী এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক হতে পারতেন। কিন্তু নতুন আইনে সেই সংখ্যা চার থেকে কমিয়ে তিনজনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সেই আইনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার একটি সার্কুলার জারি করেছে।
ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর ১৫ (১০) ধারা পরিপালন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সার্কুলার জারি করেছে।
‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর ১৫ (১০) ধারা পরিপালন’ শীর্ষক সার্কুলারটি বুধবারই সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, “এখন থেকে কোনো ব্যাংকে একক পরিবার থেকে তিনজনের বেশি সদস্য পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না।”
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কোম্পানির কোনো পরিচালকের পদত্যাগ করা আবশ্যক হলে পরিচালকদের মধ্যে কোন পরিচালক পদত্যাগ করবেন, তা পরিচালকদের পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
তবে সমঝোতা না হলে কী করতে হবে, তা–ও বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, “পদত্যাগের বিষয়ে পরিচালকেরা পারস্পরিক সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হলে পরিচালনা পর্ষদের সভায় লটারি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে, কে পদত্যাগ করবেন।”
বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এক পরিবার থেকে পরিচালকসংখ্যা তিনজনে নামিয়ে এনে বিষয়টি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগকে অবহিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে।
পরিচালকদের মেয়াদ ১২ বছর হলো যেভাবে
এদিকে এক পরিবার থেকে পরিচালকের সংখ্যা চার থেকে তিনে নামানো হলেও ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন আইনে ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী পাস করেছে সরকার।
গত ২১ জুন বিরোধী দলের তীব্র আপত্তি এবং ওয়াকআউটের মুখে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস করেছে সরকার।
এই বিল পাস করা নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্যদের ব্যাপক হইচই, প্রতিবাদ ও হট্টগোলের কারণে কিছু সময়ের জন্য সংসদে উত্তেজনা দেখা দেয়।
ব্যাংকের পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানোর সংশোধনী প্রস্তাবটি যেভাবে আনা হয়েছে, তা নিয়েই মূলত প্রবল আপত্তি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতা পরিচালকেরা। অথচ তাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এর চেয়ে পরিচালকদের মেয়াদ আজীবন করে দেওয়া হোক।
পরিচালক পদের মেয়াদ ১২ বছর করে বিল পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
গত ৮ জুন ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তুলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংশোধনীর মূল প্রস্তাবে পরিচালক পদের মেয়াদ বাড়ানো–কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব ছিল না।
পরে সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটিও পরিচালক পদের মেয়াদ নিয়ে কোনো সংশোধনী আনেনি।
কিন্তু সংসদে বিলটি পাসের আগে এ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দেন সরকারি দলের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম। তিনি পরিচালক পদের মেয়াদ টানা ১২ বছর করার প্রস্তাব করেন।
এই প্রস্তাবটি দেখে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্য। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন এভাবে বিলে সংশোধনী আনা যায় কি না। এ বিষয়ে তারা স্পিকারের ব্যাখ্যা দাবি করেন।
সংশোধনী প্রস্তাব আনা আহসানুল ইসলাম টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা প্রয়াত মকবুল হোসেন। তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি–মোহাম্মদপুর এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন (১৯৯৬–২০০১)।
কমেন্ট