ডিজিটাল ব্যাংক: ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন করা যাবে
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদনের লক্ষ্যে সকল আবেদনকারীর পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত প্রস্তাবনা তৈরি এবং বিভিন্ন দলিলাদি সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে আবেদনপত্র দাখিলের সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আলোচিত ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদনের সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে পারবে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদনের লক্ষ্যে সকল আবেদনকারীর পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত প্রস্তাবনা তৈরি এবং বিভিন্ন দলিলাদি সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনা করে আবেদনপত্র দাখিলের সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বড় পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দৃশ্যপটে। কারণ ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স পেতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রথাগত ফিজিক্যাল ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রদানকারী ও টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলো।
গত ২১ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) প্রায় ৬০টি নামের ছাড়পত্র আবেদন জমা পড়েছে।
এসব আবেদনের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক, অন্তত দুটি এমএফএস প্রদানকারী ও দুটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রয়েছে।
অনলাইন আবেদনের সময়সীমা ১ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন পায়নি। ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদনের সময় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ব্যাংকাররা বলছেন, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ বাড়তে থাকায় ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ কীভাবে বদলে যাবে—যেমন: কতগুলো লাইসেন্স দেওয়া হবে, এসব ব্যাংকের অপারেশনাল ফ্রেমওয়ার্ক, প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের কর্মসংস্থানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব, এসব ব্যাংক যেসব পণ্য দেবে—তা নিয়ে ব্যাংকাররা ভাবছেন।
ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা উপশাখা বুথ থাকবে না
দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মুঠোফোন অথবা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দেওয়া হবে।
এটি গঠনে প্রয়োজন হবে ১২৫ কোটি টাকা, পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সমগ্র বিশ্বে অন্যান্য খাতের মতো আর্থিক খাতেও সেবা প্রদানের ধরনে বৈচিত্র্য এসেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিকল্প ডেলিভারি চ্যানেল, তথা-মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এবং অন্যান্য ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুমতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা জনগনের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ক্যাশলেস বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থার আইনী কাঠামো, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিশ্লেষণপূর্বক ‘ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন বিষয়ক গাইডলাইন্স’প্রণয়ন করা হয়েছে।
শুধু ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন
নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। এর নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না।
সব সেবাই হবে অ্যাপ–নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে।
লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম ও এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় এবং মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।
৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে
একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়তে হবে।
এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।
বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ডিজিটাল ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা দেন। নতুন অর্থবছরেই এটি চালুর কথা বলেন তিনি।
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী।
ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে—যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কমেন্ট