৯ ব্যাংক মিলে আনছে ডিজিটাল ব্যাংক ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’

৯ ব্যাংক মিলে আনছে ডিজিটাল ব্যাংক ‘ডিজি টেন ব্যাংক পিএলসি’

এরই মধ্যে মঙ্গলবার সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। অন্যান্য ব্যাংকের পর্ষদও একে একে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।

এবার দেশের নয়টি বেসরকারি ব্যাংক মিলে আলোচিত ডিজিটাল ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। একসঙ্গে ৯ ব্যাংক মিলে এ ধরনের উদ্যোগ দেশে এখন পর্যন্ত এটিই প্রথম। ব্যাংকটির প্রস্তাবিত নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি’। 

এরই মধ্যে মঙ্গলবার সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। অন্যান্য ব্যাংকের পর্ষদও একে একে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।

ডিজিটাল ব্যাংক করার জন্য সিটি ব্যাংক যে আটটি ব্যাংকের সঙ্গে জোট বা কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে সেগুলো হচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি) এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক। 

ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে ৯ ব্যাংকের প্রতিটি প্রায় ১৪ কোটি টাকা করে মোট ১২৬ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেবে। 

দেশের প্রধান পুুঁজিবাজার স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।  

সম্প্রতি দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনও আহ্বান করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগের পর দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সিটিসহ ৯টি ব্যাংকের জোটবদ্ধ হয়ে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগটি এ ধরনের প্রথম। 

এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “আমাদের কনসোর্টিয়ামের অন্য ব্যাংকগুলোর নাম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোই জানাবে। আমি শুধু বলতে পারি যে আমরা দেশ সেরা নয়টি ব্যাংক মিলে এই কনসোর্টিয়াম গঠন করেছি।” 

“আমাদের সম্মিলিত গ্রাহকসংখ্যা এখনই প্রায় ৫ কোটি। আমরা যারা এ উদ্যোগে একত্র হয়েছি, তারা সবাই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় অনেক এগিয়ে রয়েছি।” 

মাসরুর আরেফিন বলেন, “কনসোর্টিয়ামে থাকা প্রতিটি ব্যাংকের ওপরই এ দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অগাধ। আমরা দেশ সেরা এই ৯ ব্যাংক যদি লাইসেন্স পাই, তাহলে ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে সরকারের স্বপ্ন আরও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ 

তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়েরও একটা পরবর্তী পর্যায় বলে কথা আছে। এই যুগে ও সময়ে সেই পরবর্তী পর্যায়টা নিঃসন্দেহে ডিজিটালি সব সেবা দেওয়ার পর্যায়। সে পর্যায়ে ওঠার জন্যই আমাদের ৯ ব্যাংকের একত্র হওয়া।”

 

ব্র্যাক ব্যাংক তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে কয়েক দিন আগে। ব্যাংকটির প্রস্তাবিত নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি’। 

এছাড়া এসিআই লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া ও ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২১ জুন ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য আবেদনের আহ্বান করে। পরে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিস্তারিত ও মানসম্মত আবেদনপত্র তৈরিতে আরও সময় দিতে এর সময়সীমা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো শাখা উপশাখা বুথ থাকবে না  

দেশে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, এই ব্যাংকের কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বুথ বা কোনো স্থাপনা থাকবে না। মুঠোফোন অথবা ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করেই গ্রাহকদের ব্যাংক সেবা দেওয়া হবে।  

এটি গঠনে প্রয়োজন হবে ১২৫ কোটি টাকা, পরিচালক হতে লাগবে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা।  

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সমগ্র বিশ্বে অন্যান্য খাতের মতো আর্থিক খাতেও সেবা প্রদানের ধরনে বৈচিত্র্য এসেছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন বিকল্প ডেলিভারি চ্যানেল, তথা-মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) এবং অন্যান্য ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুমতি দিয়েছে।  

বাংলাদেশ সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী প্রচলিত তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা জনগনের কাছে পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ক্যাশলেস বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।  

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থার আইনী কাঠামো, দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিশ্লেষণপূর্বক ‘ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন বিষয়ক গাইডলাইন্স’প্রণয়ন করা হয়েছে।  

শুধু ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন  

নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। তবে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি হবে স্থাপনাবিহীন। অর্থাৎ এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। এর নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না।  

সব সেবাই হবে অ্যাপ–নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে।  

লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম ও এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।  

ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় এবং মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।  

৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে  

একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন দিতে হবে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ছাড়তে হবে।  

এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।  

ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।  

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় ডিজিটাল ব্যাংকিং চালুর ঘোষণা দেন। নতুন অর্থবছরেই এটি চালুর কথা বলেন তিনি।  

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী।  

ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে—যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা থেকে এবার সরে গেল সৌদি কোম্পানি পরবর্তী

ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা থেকে এবার সরে গেল সৌদি কোম্পানি

কমেন্ট