নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক ঋণ ঠেকাতেই নতুন নিয়ম: ইসলামী ব্যাংক
ব্যাংকের ঋণ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সেই লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি। রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। ফাইল ছবি
ঋণ বিতরণের নতুন সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় ইসলামী ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের জোন ও শাখা পর্যায় থেকে ঋণ বিতরণ বন্ধ করা হয়নি। তারা বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনেছে।
ব্যাংকের ঋণ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সেই লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি।
দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ও মুদ্রিত সংস্করণে ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ দিতে পারবে না’ শীর্ষক সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ (বিনিয়োগ) দিতে পারবে না বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়। ব্যাংকের জোন ও শাখা পর্যায় থেকে ঋণ (বিনিয়োগ) বিতরণ যথারীতি চলমান রয়েছে। প্রতিবেদনে ‘নতুন এ সিদ্ধান্তে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমবে’ বলে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা মোটেও সঠিক নয়।
ব্যাংকের কৃষিঋণসহ পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প, নগর দারিদ্র্য উন্নয়ন প্রকল্পসহ ২৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ শাখা ও জোন পর্যায়ে যথারীতি চালু রয়েছে। যার বেশির ভাগ সুবিধাভোগী গ্রামীণ জনগোষ্ঠী।
প্রথম আলোর অনলাইন ও মুদ্রিত সংস্করণ ছাড়াও বৃহস্পতিবার কয়েকটি অনলাইনে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে একই ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে ইসলামী ব্যাংক প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখা দিয়েছে। ব্যাংখাটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি’ করা ব্যাংকটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিভিশনের প্রধান নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত “১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ দিতে পারবে না’ শীর্ষক সংবাদের পেক্ষিতে ব্যাংকের বক্তব্য” বিষয়ক ব্যাখাটি দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক বরাবর লেখা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যাখায় বলা হয়, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।”
ইসলামী ব্যাংক ঋণ বিতরণের চেয়ে এখন আদায়ের দিকে বেশি মনোনিবেশ করেছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শাখা ও জোনসমূহকে বিতরণকৃত বিনিয়োগ যথাসময়ে আদায় ও খেলাপি বিনিয়োগ ন্যুনতম পর্যায়ে রাখা এবং বিনিয়োগ সমভাবে বণ্টন নিশ্চিত করাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বিশেষ নির্দেশনা।
ব্যাংকটির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের কোনো শাখা ঋণ (বিনিয়োগ) দিতে পারবে না বিষয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়। ব্যাংকের জোন ও শাখা পর্যায় থেকে ঋণ (বিনিয়োগ) বিতরণ যথারীতি চলমান রয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘নতুন এ সিদ্ধান্তে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমবে’ বলে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা মোটেও সঠিক নয়। ব্যাংকের কৃষিঋণসহ পল্লি উন্নয়ন প্রকল্প, নগর দারিদ্র্য উন্নয়ন প্রকল্পসহ ২৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ শাখা ও জোন পর্যায়ে যথারীতি চালু রয়েছে। যার বেশির ভাগ সুবিধাভোগী গ্রামীণ জনগোষ্ঠী।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, “সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ইসলামী ব্যাংক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত অর্থ বা ঋণ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।”
“এরই অংশ হিসেবে বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণের ক্ষেত্রে তহবিল ব্যবস্থাপনায় পেশাদারত্ব বাড়ানো ও গ্রাহকদের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। অগ্রাধিকার খাত বিবেচনা করে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী, জ্বালানি, সার ও ভোগ্যপণ্যে বিনিয়োগ বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে শক্তিশালী করা হয়েছে।”
ইসলামী ব্যাংক জানায়, আমানত ও বিনিয়োগের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সময়োপযোগী নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিবর্তন করা হয়, যা ব্যাংকের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণের চেয়ে আদায়ের প্রতি অধিকতর মনোনিবেশ করছে।
“এ অবস্থায় শাখা ও জোনগুলোকে বিতরণ করা বিনিয়োগ যথাসময়ে আদায় ও খেলাপি বিনিয়োগ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা এবং সব জোন ও শাখায় বিনিয়োগ বা ঋণ সমভাবে বণ্টন নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
ইসলামী ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের ২৯টি কল্যাণমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে শাখা ও জোন পর্যায়ে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিনিয়োগ (ঋণ) বিতরণ অক্ষুণ্ন রেখে অন্যান্য বিনিয়োগ কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান কার্যালয় থেকে বিনিয়োগ বিতরণ দেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যাংক অনেক আগে থেকেই করে আসছে। ইসলামী ব্যাংকের কেন্দ্রীয়ভাবে বিনিয়োগ বিতরণ নতুন কোনো বিষয় নয়।
“বরং ব্যাংকের স্বার্থেই পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বিনিয়োগ অনুমোদনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার আলোকেই করা হয়ে থাকে। নামে-বেনামে বিনিয়োগের ব্যাপারে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, তা–ও সঠিক নয়।”
“ইসলামী ব্যাংক কোনো বেনামি বিনিয়োগ করে না। পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সম্মানী বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করেই প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিজস্ব নীতিমালা অনুসরণ করেই ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান করে থাকে।”
ব্যাংকটির ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, “আমানতকারীদের উদ্দেশে কোনো ব্যক্তিবিশেষের নেতিবাচক উসকানি প্রদান অনভিপ্রেত। আমরা লক্ষ করেছি, প্রথম আলো ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিবিশেষের মন্তব্য উদ্ধৃত করে থাকে, যা কাম্য নয়।”
“ইসলামী ব্যাংক আশা করছে, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের বিষয়ে কোনো সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রথম আলো আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।”
কমেন্ট