সোনালী ব্যাংকে মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকের হিসাব, বন্ধ চায় যুক্তরাষ্ট্র

সোনালী ব্যাংকে মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকের হিসাব, বন্ধ চায় যুক্তরাষ্ট্র

ব্যাংক দুটি হলো মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক (এমআইসিবি)। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই দুই ব্যাংকের ওপর গত জুনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

সরকারি মালিকাধীন বাণিজ্যক ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে অনুরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাসীন জান্তা সামরিক শাসনাধীন দেশটির ওই দুটি ব্যাংক বর্তমানে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

ব্যাংক দুটি হলো মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক (এমএফটিবি) ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক (এমআইসিবি)। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই দুই ব্যাংকের ওপর গত জুনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বেশিরভাগই হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।

এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়িক হিসাবের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বা আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ এ মতামত দেবে। এরপরই এই দুটি হিসাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সোনালী ব্যাংক।

৩ আগস্ট সোনালী ব্যাংকে থাকা মিয়ানমারের দুটি ব্যাংকের ব্যবসায়িক হিসাবের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বরাত দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে মিয়ানমারের ওই দুটি ব্যাংক বর্তমানে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিমকে ফোন করা হলে তিনি এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমারের ব্যাংক দুটির ১২ লাখ ডলার আমাদের কাছে জমা আছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা সেই অর্থ ব্লক করে রেখেছি। আমাদের ১/২ লাখ ডলার আছে ওই দুটি ব্যাংকে।”

“ফলে আমাদের ক্ষতি হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। পরবর্তী সময়ে কী হবে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত পাওয়ার পরই ঠিক করা হবে।”

ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, “ব্যাংক দুটিতে ভস্ট্রো হিসাব ছিল। মাঝে-মধ্যে ছোট লেনদেন হতো এসব হিসাবের মাধ্যমে। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামত চেয়েছি। এরপরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশি কোনো ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় হিসাব খুললে তাকে নস্ট্রো হিসাব বলা হয়। যে ব্যাংকে এ হিসাব খোলা হয়, ওই ব্যাংকের কাছে তা ভস্ট্রো হিসাব হিসেবে পরিচিত।

ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের চিঠি পাওয়ার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠায়।

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বেশি নয়। বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে কাঠ, হিমায়িত মাছ, আদা, পেঁয়াজ, সুপারি, উলের ঝাড়ু, নারকেল, আচার, শুকনো ফল, বেত, তেঁতুলের বীজ, ডাল ও ছোলা আমদানি করে। আর মিয়ানমারে আলু, বিস্কুট, হোসিয়ারি ও প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২১-২২ সালে মিয়ানমারে প্রায় ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে।

মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুটি ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত জুনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য কিনতে এ ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করে থাকে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম ও অস্ত্র তৈরির কাঁচামাল কেনা ও আমদানি করে থাকে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে তারা ‘নৃশংস নিপীড়ন’ চালায়।

ওয়াশিংটনের অভিযোগ, ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য ও অন্য উপকরণ আমদানি করেছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তাদের আয়ের উৎসে আঘাত হানতে দেশটির বৃহত্তম এই দুই সরকারি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। দুটি ব্যাংকই ক্ষমতাসীন জান্তার বড় আর্থিক উৎস।

ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে এক বিৃবতিতে জানানো হয়, মিয়ানমারে অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী সহিংসতার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করে আসছে। এ পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের ডলার সংগ্রহের উৎসে কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সে লক্ষ্যেই ব্যাংক দুটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ট্রেজারি বিভাগ।

আড়াই বছর ধরে মিয়ানমারে ভয়াবহ সহিংসতা চলছে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর কারাগারে বন্দি করা হয় এনএলডির শীর্ষ নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে।

রাজধানী নেপিদোর একটি সামরিক আদালতে সু চির বিচার চলছে এবং বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় ইতোমধ্যে তার ২৫ বছর কারাবাসের সাজাও ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্যাংকার্স সভা বুধবার, মুদ্রানীতি ও ডলার নিয়ে আলোচনা পরবর্তী

ব্যাংকার্স সভা বুধবার, মুদ্রানীতি ও ডলার নিয়ে আলোচনা

কমেন্ট