ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্নে বাংলাদেশ

ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্নে বাংলাদেশ

গত রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০২২ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকগুলোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার বা অনুপাত’-এর ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে।

এমন কি দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার ব্যাংকগুলোর চেয়েও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত (সিএআর) কম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মূলধন সংরক্ষণে শীর্ষে রয়েছে ভারত। এরপর পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। আর সবার নিচে রয়েছে বাংলাদেশ। 

গত রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০২২ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সিএআরের এই চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি। একটি ব্যাংকের সিএআর যত বেশি হয়, সেই ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য তত ভালো বলে মনে করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই ব্যাংকগুলোর সিএআর কয়েক বছর ধরে বাড়ছিল। তবে ব্যতিক্রম হয়েছে গত বছর, যখন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকগুলোর সিএআর কমেছে। 

গত বছরে অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাংগুলোর সিএআর বেড়েছে। তবে গত বছর ভালো করলেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর পরিস্থিতি সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়  রয়েছে। 

২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। 

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। তবে ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকগুলোর সিএআর কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। 

২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের বছর এই অনুপাত কমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা আবার বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালে এটি দাঁড়ায় ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা আবার ২০২২ সালে বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। 

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে মূলধন বাড়ছে না। আবার ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও বাড়ছে। অনেক ব্যাংক প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশও করছে না। ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী না হয়ে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। 

তিনি বলেন, “সরকারি খাতের বেশির ভাগ ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রকট। এই কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে দেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর।” 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেশি। 

ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ। এর বাইরে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। 

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়।

আমদানির আড়ালে পাচার কমলেও রপ্তানিতে বেড়েছে পরবর্তী

আমদানির আড়ালে পাচার কমলেও রপ্তানিতে বেড়েছে

কমেন্ট