জুনে কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ২০ শতাংশ কমেছে

জুনে কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ ২০ শতাংশ কমেছে

জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিরা ৩৮৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ খরচ করেছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে নানা প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে দেশের মানুষ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩৮৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। এই অঙ্ক আগের মে মাসের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুন মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিরা ৩৮৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ খরচ করেছে। 

এর আগের মাসে বাংলাদেশিদের খরচ ছিল ৪৮৫ কোটি টাকার সমান। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে ডলার খরচ কমেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। 

বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে কার্ডে পেমেন্টের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডলার রেট রয়েছে। তবে গড় ডলার রেট ১১০ থেকে ১১১ টাকা। সে হিসাবে জুন মাসে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন (৩ কোটি ৫০ লাখ) ডলার খরচ করেছে। 

সবচেয়ে বেশি খরচ ভারতে 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের মাসগুলোর মতো জুন মাসেও বাংলাদেশিরা ভারতে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে। দেশটিতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছে ৬১ কোটি টাকা, যা মোট খরচের প্রায় ১৬ শতাংশ।  

এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ শতাংশ, সৌদি আরবে ৮ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৬ শতাংশ, কানাডাতে ৬ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া ও নেদারল্যান্ডসে ৫ শতাংশ খরচ করেছে বাংলাদেশিরা। 

ব্যাংকাররা জানান, ক্রেডিট কার্ডে ডলার খরচ করার আগে গ্রাহকদের প্রথমে ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্টের মাধ্যমে ডলার এনডোর্স করতে হয়। পরে অনুমোদনকৃত ডলার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করা যায়।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারেন। 

তবে শুধু বাংলাদেশীরাই নয়, বিদেশিরাও বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ডলার খরচ করেছেন। গত জুনে বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন ১৯৬ কোটি টাকা, যা মে মাসে ছিল ২১০ কোটি টাকা; অর্থাৎ এক মাসে লেনদেন কমেছে ৭ শতাংশ। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীরা জুন মাসে যে পরিমাণ অর্থ লেনদেন করেছে, তা একই সময়ে বাংলাদেশের মধ্যে বিদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীদের লেনদেনকৃত অর্থের প্রায় দ্বিগুণ।  

দেশে বেড়েছে 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ খরচ মে মাসের তুলনায় জুনে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। জুনে খরচের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা; মে মাসে এই অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা। 

ক্রেডিট কার্ডধারীদের ব্যয়ের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতেই ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। 

জুনে ক্রেডিট কার্ডের মোট খরচের প্রায় ৪৬ শতাংশ খরচ করা হয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে;  ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এক্ষেত্রে। ১৩ শতাংশ খরচ হয়েছে ফান্ড ট্রান্সফারে।  

এছাড়া কার্ডধারীরা বিভিন্ন রিটেইল আউটলেট, নগদ উত্তোলন, পোশাক কেনাকাটা, ওষুধ ও ফার্মেসি, পরিবহন এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কার্ড ব্যবহার করেছেন। 

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুনে বিদেশের সুপারশপে বাংলাদেশিরা ১৫৭ কোটি টাকার কেনাকাটা করেছেন। তারা ওষুধ কিনেছেন ৬১ কোটি টাকার, কাপড় কিনেছেন ৪৬ কোটি টাকার ও যাতায়াতে ব্যয় করেছেন ২৯ কোটি টাকা। 

ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে আরও আছে নগদ টাকা উত্তোলন, ব্যবসা সেবা, পেশাগত সেবা ও সরকারি সেবা গ্রহণের মতো খাত। 

লেনদেনে কার্ডের ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিসা কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এর পরিমাণ ৭৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর পরই রয়েছে মাস্টার কার্ড। এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাকি প্রায় ৯ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অন্যান্য কার্ডের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে। 

ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্নে বাংলাদেশ পরবর্তী

ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্নে বাংলাদেশ

কমেন্ট