বেশি দামে ডলার বিক্রি: ৭ মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত
এক মাসের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দর ৬ টাকা বেড়েছে।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ডলারের। গত কয়ক দিন ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক মাসের ব্যবধানে খোলা বাজারে ডলারের দর ৬ টাকা বেড়েছে।
বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে ডলারের দর বাড়িয়েছে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এ অবস্থায় বিশেষ পরিদর্শনে ৭টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া আরও ১০ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য রিপোর্ট এবং নিয়মিত রিপোর্ট না করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
লাইসেন্স স্থগিত করা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে– ইয়র্ক মানি এক্সচেঞ্জ, জামান মানি চেঞ্জিং হাউজ, জেনি মানি এক্সচেঞ্জ, স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ, মার্সি মানি এক্সচেঞ্জ, জেবি মানি এক্সচেঞ্জ ও বেঙ্গল মানি এক্সচেঞ্জ।
অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়মে সম্পৃতক্ততার দায়ে আরও ১০টি মানিচেঞ্জারের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে– নিউ প্রাইম মানি চেঞ্জার, উত্তরা মানি চেঞ্জার, মিসা মানি এক্সচেঞ্জ, যমুনা মানি এক্সচেঞ্জ, পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জ, বুড়িগঙ্গা মানি এক্সচেঞ্জ, স্কাফ মানি চেঞ্জার, হযরত খাজা বাবা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, গ্লোরি মানি এক্সচেঞ্জ এবং মাতৃক মানি চেঞ্জার।
বর্তমান নিয়মে মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়শনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংকের তুলনায় মানিচেঞ্জারগুলো ডলার বেচেকেনায় সর্বোচ্চ এক টাকা পার্থক্য রাখতে পারবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১১১ টাকা ৫০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করছে।
সেই হিসেবে মানিচেঞ্জারে ডলারের সর্বোচ্চ দর হওয়ার কথা ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে গত সপ্তাহে ১১৮ টাকা পর্যন্ত ডলারের দর উঠেছিল। অবশ্য বিভিন্ন অভিযানের ফলে দর কিছুটা কমে ১১৬ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে।
মানিচেঞ্জারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানান, ব্যাংকগুলোর ডলার বেচার দরে একটি বড় ফাঁকি আছে। তারা ১১১ টাকা ৫০ পয়সা বললেও আসলে দর পড়ছে ১১৫ টাকার বেশি। কেননা, ১১১ টাকা ৫০ পয়সার ওপর ব্যাংক ৩ শতাংশ হারে তিন টাকা ৩৪ পয়সা সার্ভিস চার্জও নিচ্ছে। সার্ভিস চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাবদ কেটে রাখছে আরও ৫২ পয়সা।
তারা আরও জানান, এর বাইরে অনেক ব্যাংক আবার এন্ডোর্সমেন্ট চার্জ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে ১১৫ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ১১৬ টাকার বেশি পড়ে যাচ্ছে। এতে করে নগদ ডলার বেচাকেনায় মানিচেঞ্জারে ঝুঁকছেন মানুষ।
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থাৎ রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই পাগলা ঘোড়ার মত ছুঁটেছে ডলার; কমেছে টাকার মান। অর্থাৎ দুর্বল হয়েছে টাকা। শক্তিশালী হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে। তার আগে জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত দেড় বছরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।
তারও আগে প্রায় দেড় বছর ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খোলাবাজারেও ডলারের দর বেড়েছে। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়ায়। এর পর ছুঁটতে ছুঁটতে আগস্ট ১০ আগস্ট ১২০ টাকায় উঠে।
এর পর এক বছরের বেশি সময় ১১১ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা হয়েছে। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম দিকে ডলারের দর ১১৫ টাকা ছাড়ায়। এর পর গত কয়েক দিন ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কমেন্ট