‘ব্যাংকঋণের সুদহার আরও বাড়বে’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, “দেশে আগামী দিনে ব্যাংকঋণের সুদহার আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। এ জন্য দেশের অভ্যন্তরেও সুদহার আরও বাড়তে পারে।”
দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার আরও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেছেন, “দেশে আগামী দিনে ব্যাংকঋণের সুদহার আরও বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। এ জন্য দেশের অভ্যন্তরেও সুদহার আরও বাড়তে পারে।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন সালমান রহমান।
১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশে আগে সুদহার ১৭-১৮ শতাংশ থাকার কথা উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, “ওই সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুদহার কম ছিল। লাইবর রেট (লন্ডন আন্তব্যাংক সুদহার) ছিল ১ শতাংশের কম। এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সুদহার কম ছিল।
“ফলে তখন একটা ধারণা তৈরি হয় যে দেশের ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত লাভ করছে এবং ১৬-১৭ শতাংশ সুদ দিয়ে কোনো ব্যবসায়ী লাভবান হতে পারবেন না। এ জন্য পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা বেঁধে দেন। এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিপোজিট (আমানত) কমে যায়। এভাবে অনেক দিন সুন্দরভাবে চলেছে। সরকার অনেক দিন ধরেই ব্যাংকের সুদ নিয়ন্ত্রিত রেখেছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিকভাবেই সুদহার বেড়েছে।”
তিনি বলেন, “এখন বড় অর্থনীতির সব দেশে সুদহার বেশি। এখন তো লাইবর নেই, সোফর রেট এখন প্রায় ৫ শতাংশের ওপরে। ডলার ধার (বোরোয়িং) করার সুদহার ৮-৯ শতাংশ। অথচ আগে ২-৩ শতাংশ সুদে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান ডলার ধার করত। এমন বাস্তবতায় দেশেও সুদহারে প্রভাব পড়ার কথা।”
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ৯ শতাংশ সুদের সীমা তুলে দিয়ে একটা ফর্মুলা দিয়েছে। এতে ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে সুদহারও বাড়তে শুরু করেছে। তবে সুদহার যেন আগের মতো ১৬-১৭ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে না পারে, সে জন্য সীমা পুরোপুরি তোলা হয়নি।
“এখন নিলামের মাধ্যমে ট্রেজারি বিলের সুদ বাড়তে থাকলে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারও বাড়বে।”
সেপ্টেম্বরে ‘স্মার্ট’ সুদহার ৭.১৪%
চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আগের দুই মাস জুলাই ও আগস্টের চেয়ে ঋণের সুদ হার বাড়বে। নতুন ঋণের ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর মাসে ‘স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার হবে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আগের দুই মাস এই সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
বড় অংকের ঋণের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ, এ মাসে ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করে ঋণের বিপরীতে সুদ নিতে পারবে ব্যাংক বাহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)।
ট্রেজারি বিলের সুদ হারের ছয় মাসের গড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক সেপ্টেম্বর মাসের এই স্মার্ট রেট হিসাব করেছে। যা বৃহস্পতিবার রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে এই ‘স্মার্ট’ সুদহার করিডোর চালু করা হয়।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই সুদহার ছিল একই, ৭ দমিক ১০ শতাংশ। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ‘স্মার্ট’ সুদহার বেড়ে ৭ দশমিক ১৪ হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’ রেট জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই হার সেই মাসে দেওয়া নতুন ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য এই সুদহার কার্যকর থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, সুদ হার বাড়ায় মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা কিছুটা সহজ হবে। আর নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অনেক ব্যাংকেই আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে।
সিটিআইএফ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াবে
সংবাদ সম্মেলনে সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় ‘কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম (সিটিআইএফ)’ শীর্ষক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
এই সম্মেলন দেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াবে বলে আশার কথা শোনান তিনি।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অংশীদারত্ব বৃদ্ধি, উদ্ভাবন প্রচার এবং বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণের লক্ষ্যে সম্মেলনটি আয়োজন করা হচ্ছে। এর উদ্যোক্তা কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল। এতে সহযোগী হিসেবে থাকছে বিডা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেডআই ফাউন্ডেশন।
সম্মেলনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশের ব্যবসায়ী, সরকারি প্রতিনিধি ও অংশীজনেরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া কমনওয়েলথের বাইরের দেশের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। সম্মেলনে মোট ১২টি অধিবেশন থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘কমনওয়েলথভুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ শীর্ষক পুরস্কার প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, “ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির এক অসাধারণ সুযোগ করে দেবে। ফোরাম চলাকালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সামনে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগগুলো প্রদর্শন করতে পারবে।”
কমেন্ট