মাহবুবুল আলম বলেছেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সুদের হার বৃদ্ধি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সুদের হার বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংক ঋণের সুদের হার না বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের  শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

একই সঙ্গে নির্ধারিত দামে ব্যবসায়ীরা যেন ডলার কিনতে পারেন, সে জন্য গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

মাহবুবুল আলম বলেছেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিদেশি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সুদের হার বৃদ্ধি না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সুদের হার বৃদ্ধি করা হলে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাবে এবং স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর  রউফ তালুকদারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এফবিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল। তখন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এই অনুরোধ করেন। 

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বিবেচনায় নিয়ে সব খাতের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণের সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। 

এছাড়া নির্ধারিত দামে যেন ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারেন এজন্য গভর্নরকে অনুরোধ জানান মাহবুবুল আলম। 

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি  উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন নারী উদ্যোক্তারাও।” 

“কিন্তু, ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনও ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে।” 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়। কোনো নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না।” 

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে কামনা করেন তিনি। একইসঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, “হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে সুদহার বেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুদহার অস্বাভাবিক হারে বাড়বে না। এখনকার পদ্ধতি অনুসারে সামান্য পরিমাণ ধাপে ধাপে বাড়তে পারে।” 

“নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরকেও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে ব্যাংকগুলোকে সম্প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।” 

গভর্নর বলেন, “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এরই মধ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্প খাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারেন সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।” 

এ সময় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।