বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়লেও সরকারি ব্যাংকে কমছে

বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়লেও সরকারি ব্যাংকে কমছে

চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট কর্মী ছিলেন প্রায় দুই লাখ। তাদের মধ্যে ৩২ হাজার ৫৬৭ বা ১৬ দশমিক ৩২ নারী। এই অঙ্ক গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের চেয়ে় ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ফাইল ছবি

ব্যাংক খাতে নারী কর্মী বাড়ছে। বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা গত ছয় মাসে ১৬ দশমিক ৫২ থেকে কমে ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট কর্মী ছিলেন প্রায় দুই লাখ। তাদের মধ্যে ৩২ হাজার ৫৬৭ বা ১৬ দশমিক ৩২ নারী। এই অঙ্ক গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের চেয়ে় ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট জনবল দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৯ জন। নারী কর্মী ৩২ হাজার ৫৬৭ জন। 

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক খাতে যত লোক কাজ করেন, তার ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ নারী। ২০২২ সালের জুনের শেষে দেশের ব্যাংক খাতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৫৪৮ জন। শতকরা হিসাবে যা ছিল ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে। 

সোমবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবেও নারীদের দেখা যাচ্ছে। যেমন বর্তমানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হুমায়রা আজম। 

তবে বিপরীত চিত্রও আছে। সেটি হলো ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়ে পুরুষের তুলনায় নারীদের ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার হার বেশি। নারী ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিক ও সামাজিক নানা চাপের কারণে তারা ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব ব্যাংকে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা সমানভাবে বাড়েনি। বিদেশি ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে, যেখানে মোট কর্মশক্তির ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ নারী। ডিসেম্বরের শেষে এ খাতে নারী কর্মকর্তা ছিল ২৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। 

এছাড়া বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে নারীদের কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা গত ছয় মাসে ১৬ দশমিক ৫২ থেকে কমে ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে।

 

জানুয়ারি-জুন মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট ৩,৪০৪ জন নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬২৮ জন বা ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ নারী। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত চলতি জানুয়ারি-জুন সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, ব্যাংকে যারা ক্যারিয়ার শুরু করছেন, তাদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ নারী। ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ নারী। 

২০২২ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করছিলেন ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ নারী। ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। 

আর ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে নারীর অবস্থান ছিল ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সেই হিসাবে এক বছরে ব্যাংক খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়, পরিচালক, বড় ধরনের উচ্চপদে নারীর অবস্থান এখনও  অনেক কম। কর্মক্ষেত্রে নারীর এ অগ্রগতিকে টেকসই করতে হবে। কর্মপরিবেশ আরও নিরাপদ করতে হবে। এ জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধ, উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি।” 

“আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকে নারী কর্মির সংখ্যা বাড়লেও সরকারি ব্যাংকে কিন্তু কমেছে। এ বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।” 

সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার এলিজা খানম বলেন, “ব্যাংকিংয়ে নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে ভালো। তবে ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়ে অনেকে সন্তান-সংসার সামলানোর কারণে চাকরি ছাড়ছেন। ফলে ব্যাংকে উচ্চপদে নারী কমছে।” 

“এ প্রবণতা কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। তা হলে ব্যাংক খাতের উচ্চপদে, মানে নেতৃত্বে আরও নারীকে দেখা যাবে।” 

২০২২ সালের জুন নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতে বোর্ড সদস্য বা পরিচালক হিসেবে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে চলতি জুন শেষে সেটা বেড়ে হয়েছে ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। 

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের এক-তৃতীয়াংশই থাকবেন নারী। এ ছাড়া সরকারের শেয়ার রয়েছে, এমন বেসরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। 

সরকারি ব্যাংকগুলোয় নীতিনির্ধারণের জন্য পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। নারী উদ্যোক্তা, সাবেক নারী ব্যাংকার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মালিকদের স্ত্রী, কন্যা, পুত্রবধূ ও ঘনিষ্ঠজনদের পরিচালক হিসেবে দেখা যায়। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি নারী কর্মীর সংখ্যা বেসরকারি ব্যাংকে। ৯টি বিদেশি ব্যাংকে ৯৭০ জন নারী কর্মকর্তা কাজ করেন। এই সংখ্যা অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে কম হলেও শতাংশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। ৪৩টি বেসরকারি ব্যাংকে নারী কর্মী ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। 

ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকে ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ নারী কর্মী রয়েছেন। 

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকগুলোয় প্রচুর নারী কর্মী যোগ দেন। কিন্তু পরে কাজের চাপ সামলাতে না পারা ও সন্তান লালন-পালনের জন্য ব্যাংকের চাকরি ছাড়েন তারা। 

নারী ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিশু দিবাযত্নকেন্দ্রের মতো সুবিধা সব শাখায় সমানভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ব্যাংকের পর্যাপ্ত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র ও যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা আরও বাড়ত। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকেও উদ্যোগ নিতে হবে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, নারীদের জন্য দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর হচ্ছে। এসব ব্যাংকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা আছে। ব্যাংকগুলোতে  নিয়মিতভাবে লিঙ্গসমতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে।  

৩৬টি তফসিলি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র স্থাপন করেছে। নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সব ব্যাংকের আছে নিজস্ব পরিবহন সুবিধা।

সুদের হার না বাড়াতে গভর্নরকে অনুরোধ এফবিসিসিআই সভাপতির পরবর্তী

সুদের হার না বাড়াতে গভর্নরকে অনুরোধ এফবিসিসিআই সভাপতির

কমেন্ট