৩ মাসে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার
চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।
দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় দেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।
সরকারি হিসাবেই দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশের (দুই অঙ্কের ঘরে, ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি পৌঁছেছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে এক লাফে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ খাবারের জন্য এখন মানুষকে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমেছেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। কিন্তু এর মধ্যেও কোটি টাকার হিসাব এক লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন- এই তিন মাসে এক কোটি টাকার বেশি জমা আছে এমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি জমা থাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। জুন শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি অ্যাকাউন্টে মোট ৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা জমা ছিল।
এছাড়া মার্চ শেষে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট জমা ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪৩ শতাংশ এসব ধনীদের। তিন মাস আগে যা ছিল ৩২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ যখন দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন নতুন ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার মানে হলো বৈষম্য বাড়ছে।”
তবে এক কোটি টাকার ওপরে জমা থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো শুধু ব্যক্তি নয়, অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাও আছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে, এক প্রতিষ্ঠান বা এক ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২ টি। যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা।
পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব।
আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি।
তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি।
কমেন্ট