ডলারের অগ্রিম বুকিং ৩ মাসের জন্য, দাম ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সা
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। ডলারের বর্তমান দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে তিন মাসের জন্য বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম পড়বে ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সা।
সমালোচনার মুখে দুই দিনের ব্যবধানে ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরওয়ার্ড রেট) নির্ধারণে নতুন নিয়মে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগাম ডলার বুকিং দিতে পারবে শুধুমাত্র আমদানিকারকরা। বুকিংয়ের সর্বোচ্চ সময় হবে তিন মাস। আগের নির্দেশনায় এ সীমা ছিল সর্বোচ্চ এক বছর।
পরিবর্তিত নিয়মে আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ তিন মাসের জন্য ডলারের অগ্রিম বুকিং দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য ডলারের ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করবে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। ডলারের বর্তমান দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে তিন মাসের জন্য বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম পড়বে ১১৩ টাকা ৮৫ পয়সা।
আর কোনো আমদানিকারক যদি তিন মাসের কম সময়ের জন্য ডলার বুকিং দেন, সে ক্ষেত্রে আনুপাতিক হারে ডলারের দাম নির্ধারণ হবে।
এর আগে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরওয়ার্ড রেট) নির্ধারণে নতুন নিয়ম চালু করে। তাতে বেঁধে দেওয়া হয় ডলারের দামের সর্বোচ্চ হার।
সেই নিয়মে এক বছর পর ব্যাংক ডলারের দাম বর্তমানের চেয়ে স্মার্ট হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে। যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, সেটি পরিচিত স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে।
প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টেও ছিল একই; ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আমদানিকারকদের কাছে বেশি দামে ডলার বিক্রি ও বেশি দামে প্রবাসী আয় কেনার কারণে বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নিয়মটি চালু করেছে।
এসব ব্যাংকের কয়েকটি ভবিষ্যৎ দাম আদায় করতে গিয়ে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দাম রেখেছিল বলে জানা যায়।
ডলার ক্রয় ও বিক্রয়—উভয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ দাম নির্ধারণ করা যায়। তাই চাইলে কোনো আমদানিকারক এখনই ডলার কিনে রেখে পরে পণ্য আমদানি করতে পারেন। এ জন্য তাকে ডলারের বর্তমান দামের সঙ্গে বাড়তি কমিশন দিতে হয়।
এ ক্ষেত্রে দাম কমে গেলেও আমদানিকারককে বর্তমান দামই দিতে হবে। আবার দাম বেড়ে গেলে তিনি সুবিধা পাবেন; অর্থাৎ বাড়তি দাম দিতে হবে না।
আমদানিকারকের মতো রপ্তানিকারকেরাও ডলারের ফরোয়ার্ড সেল বা অগ্রিম বিক্রি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে ওই রপ্তানিকারককে লোকসান গুনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময়ে সময়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম প্রতি মাসেই বাড়ছে। রোববার বাফেদা ও এবিবির সভায় ডলারের দর আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন এই বিনিময় হার কার্যকর হয়েছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার থেকে ব্যাংকগুলো ১১০ টাকায় ডলার কিনে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে ডলারের দর ৫০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা হয়েছে। আর আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
সব ব্যাংক নিজেদের ঘোষিত দামেই ডলার বিক্রির কথা বলে। তবে অভিযোগ আছে, বাস্তবে এই দামে ডলার কেনা-বেচা হচ্ছে খুব কম।
‘ডলার বুকিং নিয়ে ভয় নয়’
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিংয়ের সুযোগ একটি নিয়মিত কার্যক্রম। ডলার সংকট যে আরও বাড়বে বিষয়টা এমন নয়। তাই এ বিষয়ে ভয় বা শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, “ডলার বুকিং একটি নিয়মিত বিষয়। বড় বড় প্রতিষ্ঠান আমদানি মূল্য যথা সময়ে পরিশোধ করতে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।”
“এর মানে ভবিষ্যতে ডলার সংকট আরও বাড়বে বিষয়টা এমন নয়। কমতেও পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।”
কমেন্ট