খেলাপির তথ্য দ্রুত পেতেই শাখাকে সিআইবিতে প্রবেশের সুযোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

খেলাপির তথ্য দ্রুত পেতেই শাখাকে সিআইবিতে প্রবেশের সুযোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে, তা মোটেই ঠিক নয়।” ছবি; এআরএইচ ডটকম

ঋণ পরিশোধের পর এখন সঙ্গে সঙ্গেই ‘খেলাপিমুক্ত’ সনদ পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) অনলাইন ডেটাবেইজে দেশে কার্যরত সব ব্যাংকের সব শাখার প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার ফলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানিয়েছেন।

বুধবার বিকেলে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।

‘সিআইবির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ শীর্ষক খবরের বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে, তা মোটেই ঠিক নয়।”

বিষয়টি ষ্পষ্ট করে তিনি বলেন, “সিআইবি তথ্য তাৎক্ষণিক পেতে প্রাইমারি সোর্স হলো ব্যাংকের শাখা। অনেক গ্রাহক ঋণ শোধ করার পরও সিআইবি মাসের পর মাস আপডেট হয় না। এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য এবং রিয়েল টাইম তথ্য জানার জন্য সিআইবি অনলাইন ডাটাবেইজে সব ব্যাংকের শাখাগুলোর প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

“এ সুবিধার কেউ যদি অপব্যবহার করে তবে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১০৯ ধারা অনুযায়ী জেল এবং জরিমানা অথবা উভয় শাস্তিরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে যে মন্তব্য করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানান মেজবাউল হক।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সিআইবি অনলাইন ডেটাবেইজে গ্রাহকের ঋণ সক্রান্ত তথ্য হালনাগাদে ব্যাংকের অংশগ্রহণ আগের থেকে বেড়েছে।

“গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে এই ডেটাবেইজের এক্সেস দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে দ্রুততম সময়ে ঋণগ্রহীতার খেলাপি সংক্রান্ত স্ট্যাটাস হালনাগাদ করা সম্ভব হচ্ছে।”

আগে এই এক্সেস দেওয়া হতো কেবল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়কে, শাখার কোনো কর্মকর্তা তাতে অংশ নিতে পারতো না। এ কারনে ঋণ পরিশোধ করার পরও খেলাপিমুক্ত সনদ পেতে অনন্ত এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতো।”

নতুন পদ্ধতিতে ব্যাংক শাখাকে অন্তর্ভূক করলেও এ খাতের সকল শর্ত ও ফি আগের মতই রাখা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। বলেন, “ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো ইনপুট দেওয়া হলে তা সঙ্গে সঙ্গেই সিআইবি অনলাইনে আপলোড হবে না। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। শাখা অনিয়ম করলে তা ধরা পড়বে।”

মেজবাউল হক বলেন, “সিআইবি তথ্য ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকে হালনাগাদ করার সঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকে সিআইবির তথ্য পরিবর্তন করার যে খবর প্রচার হচ্ছে, তা সঠিক নয়।”

ব্যাংকের শাখা পর্যায় থেকে তথ্য হালনাগাদ করার বিষয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট করতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, “শাখা থেকে তথ্য হালনাগাদ করলেই সিআইবি তথ্য পরিবর্তন হয়ে যাবে না। এর জন্য আলাদা অনুমোদনকারী কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন। চাইলে যে কেউ সিআইবির তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন, এই ধারণা সঠিক নয়।”

তিনি বলেন, “দ্রুতই আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে এগোচ্ছি, আমাদের সব সিস্টেম ডিজিটাল হওয়া খুবই প্রয়োজন। ভবিষ্যতে কোনো গ্রাহকের সার্বিক তথ্য যাচাই করতে গেলে অনলাইনে তার পর্যাপ্ত তথ্য থাকা প্রয়োজন।

“তাই সিআইবি সিস্টেমকে আরও সক্রিয় করার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।”

মেজবাউল হক বলেন, “এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কাজের অংশ। তারই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ছিল এটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় বলেন, “আগে ব্যাংকে তিন থেকে চারটি ইউজার আইডি দেওয়া হতো। এখন সেটি বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে নতুন কিছুই করা হয়নি।”

তিনি বলেন, “সিআইবি সংক্রান্ত রিপোর্ট সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা কোনো বিড়ম্বনা তৈরি করবে না। বরং তথ্য হালনাগাদ প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি বিভাগটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগটির মূল দায়িত্ব হচ্ছে—দেশের ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে ব্যাংক তথা সাধারণ জনগণের আমানত সুরক্ষিত রাখা।

সিআইবির মাধ্যমে দেশের যে কোনো ঋণগ্রহীতার তথ্য জানতে পারে অন্য ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একজন ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যাংকে খেলাপি হলে অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওই গ্রাহককে কোনো ঋণ দেবে না।

আইডিবিও ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে গেল পরবর্তী

আইডিবিও ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে গেল

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর