আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ২০০০০ কোটি টাকা
চলতি বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এই অঙ্ক মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠাানগুলোতেও (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এই অঙ্ক মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
তিন মাস আগে গত মার্চ শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে—তিন মাসের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। তবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা।
গত বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকার ঋণ। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর পরের প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কমেছে ৫০৬ কোটি টাকা।
আর চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে বেড়েছে ১ হাজার ৩৪ কোটি এবং এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ছাড়ের পরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। গত জুন পর্যন্ত কেউ কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করলে তাকে খেলাপি না করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার ফলে খেলাপি ঋণ কমার কথা ছিল। কিন্তু উল্টো বেড়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার হামিদ বলেন, গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয় খাতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। মূলত ঋণ পরিশোধে বেশিরভাগ শিথিলতা তুলে নেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে অনেকে কিস্তি পরিশোধ করেনি। তাই খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত বেশ আগে থেকেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর মধ্যে একসময় প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও তিন প্রতিষ্ঠান তথা বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এফএএস ফাইন্যান্সের নানা জালিয়াতির বিষয় সামনে আসে। ব্যাপক লুটপাটের কারণে তহবিল সংকট চলছে এসব প্রতিষ্ঠানে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, তারল্য সংকটের মধ্যে ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়মের কারণে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় আমানত পেতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ থাকার কারণে অনেকে ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
কমেন্ট