খেলাপি ঋণ কমাতে ৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কঠোর বার্তা

খেলাপি ঋণ কমাতে ৭ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কঠোর বার্তা

বৈঠকে সাত প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। খুব শিগগিরই বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনার আওতায় নিয়ে আনা হবে।

দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

গত জুন শেষে দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এই অঙ্ক মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

বিশাল অঙ্কের এই খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানকে মূলধন সংরক্ষণসহ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কঠোর বার্তা দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই সঙ্গে সংকট উত্তরণে বিস্তারিত পরিকল্পনা জরুরিভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই বার্তা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, “সাত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বৈঠক ডেকেছিল। বৈঠকে খেলাপি ঋণ কমাতে ও মূলধন ঘাটতি মেটাতে একটি কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায় কেন্দ্রীয় চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।”

বৈঠকে সাত প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। খুব শিগগিরই বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনার আওতায় নিয়ে আনা হবে। যদিও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংকট নেই বলে জানান মুখপাত্র মেজবাউল হক।

তিনি আরও বলেন, “একেকটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা এক এক রকমের। তাই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা তাদের কাছ থেকে আসা উচিত। তবেই সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে।”

এর আগে ২৭ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় জানানো হয়, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিতে খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি।

এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের নির্দেশ দেয়।

ব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠাানগুলোতেও (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এই অঙ্ক মোট ঋণের ২৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

তিন মাস আগে গত মার্চ শেষে ঋণ স্থিতি ছিল ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে—তিন মাসের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। তবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা।

গত বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকার ঋণ। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, এখন তার জের টানছে পুরো খাত। পিকে হালদারের মালিকানা আছে বা ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।

পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এ খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৮০ শতাংশের বেশি, সেগুলো হলো-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

এর মধ্যে প্রথম চারটি প্রতিষ্ঠানে মালিকানা আছে পিকে হালদারের। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ টাকা তিনি নামে-বেনামে তুলে নিয়েছেন, যা এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তাই ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি বাড়ে। দেখা দেয় বিভিন্ন সংকট।

অবলোপন করা খেলাপি ঋণ ৬৮ হাজার কোটি টাকা পরবর্তী

অবলোপন করা খেলাপি ঋণ ৬৮ হাজার কোটি টাকা

কমেন্ট