মুদ্রানীতি কমিটিতে ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, বিআইডিএসের ডিজি

মুদ্রানীতি কমিটিতে ঢাবি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, বিআইডিএসের ডিজি

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। পাশের দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত মুদ্রানীতি কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরের তিন জন বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে।

এই তিন জন হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক (ডিজি) এবং বেসরকারি খাতের একজন প্রতিনিধি।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানিয়েছেন।

বেসরকারি খাতের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে কে থাকবেন—তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঠিক করবে বলে জানান তিনি।

মুদ্রানীতি প্রণয়নে বর্তমানে ৯ সদস্যের কমিটি রয়েছে। এ কমিটির প্রধান গভর্নর। বাকি ৮ সদস্যের মধ্যে ছিলেন—চার ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধের তদারকি সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক।

নতুন পুনর্গঠিত কমিটি হবে ৭ সদস্যের; যার প্রধানও হবেন গভর্নর। তবে নতুন কমিটিতে তিনজন ডেপুটি গভর্নরকে বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে থেকে তিন জনকে যুক্ত করা হচ্ছে।

অপর তিন সদস্যের মধ্যে থাকবেন মুদ্রানীতি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও মুদ্রানীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অনেক দেশে মুদ্রানীতি কমিটিতে বাইরের বিশেষজ্ঞ রাখা হয়। এতে মুদ্রানীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজ হয়। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকও মুদ্রানীতি কমিটিতে বাইরের বিশেষজ্ঞ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে—তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

সব‌শেষ গত ১৮ জুন চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডি‌সেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়।

নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ণের আগে মুদ্রানীতি কমিটি নিজেরা একাধিকবার বৈঠক করে স্বাধীনভাবে উপকরণগুলো ঠিক করে থাকে। এক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া ছাড়া অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে চলতি অর্থবছর থেকে মুদ্রানীতির পরিচালন কাঠামোতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। মুদ্রানীতি কাঠামোতে সুদহারের করিডোর প্রথা চালু করা হয়েছে। এর আওতায় সুদহার টার্গেটিং মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।

অর্থাৎ মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট বা টুলস হিসেবে সুদের হারকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাজারে অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক এখন মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই গত সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক বা মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ; খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের সেপ্টেম্বরে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৬৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

আর ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের সেপ্টেম্বরে তা কিনতে ১১২ টাকা ৩৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

এই তথ্যই বলছে, দেশের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে গরিব মানুষ ও নিম্মমধ্যবিত্তরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। কেননা, বাজারে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, সে অনুপাতে তাদের আয় বাড়েনি। অর্থাৎ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি।

মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখাই মুদ্রানীতির প্রধান কাজ। বর্তমান পেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যুৎসই কৌশল ঠিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে তিন জন বিশেষজ্ঞকে মুদ্রানীতি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

‘নয়-ছয় সুদহার বেঁধে না দিলে ব্যাংকিং খাত খুঁজে পাওয়া যেত না’ পরবর্তী

‘নয়-ছয় সুদহার বেঁধে না দিলে ব্যাংকিং খাত খুঁজে পাওয়া যেত না’

কমেন্ট