কঠিন সময় পার করে এসেছি, সামনে ভালো সময় আসছে: গভর্নর

কঠিন সময় পার করে এসেছি, সামনে ভালো সময় আসছে: গভর্নর

গভর্নর বলেন, “টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, ব্যাংকের সুদের হারও বাড়ছে। বাজারে টাকার সরবরাহ কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।”

অর্থনীতির চলমান সংকটের মধ্যে ‘টানেলের শেষ মাথায় আলো’ দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে ও আগামী বছরের জুনের মধ্যে তা সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে। বিনিময় হারও এর মধ্যে ঠিক হয়ে আসবে। আর সেটি হলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।”

গভর্নর বলেন, “টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে, ব্যাংকের সুদের হারও বাড়ছে। বাজারে টাকার সরবরাহ কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।”

“কঠিন সময় পার করে এসেছি। সামনে ভালো সময় আসছে। মার্চের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।”

তবে তিনি অর্থনীতিবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে চিন্তিত। বলেন, “অর্থনীতির কারণের পাশাপাশি অর্থনীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডও মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

গভর্নর যেদিন মূল্যস্ফীতি কমে আসার আশা ব্যক্ত করেন, সেদিন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির অক্টোবরের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে ওই মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে উঠেছে।

বিবিএসের হিসাবে, খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ধরনের মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনে এখন দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতির চাপই সবচেয়ে বেশি।

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এসব কথা বলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গভর্নরের পাশাপাশি অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ও চার ডেপুটি গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আর ইআরএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বৈঠকে গভর্নর অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার নিয়ে সমস্যা আছে। পাশাপাশি আর্থিক হিসাবে ঘাটতি এখন সমস্যা। তবে এসব সমস্যা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।”

“কঠিন সময় পার করে এসেছি। সামনে ভালো সময় আসছে। মার্চের মধ্যে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।’

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতিবিদ, গবেষক, সাবেক গভর্নরসহ অর্থনীতিবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।

তারই শেষ অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ইআরএফের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে গভর্নরসহ সরকারের দুই সচিবও অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনীতির নানা সূচক, নীতি উদ্যোগ ও তার প্রভাব নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইআরএফের সদস্য ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকেরা অর্থ পাচার রোধ, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেন।

পাশাপাশি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে যে সমস্যা চলছে, তা নিরসনেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেন। এ ছাড়া সমস্যায় পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন, ডিজিটাল লেনদেন ব৵বস্থা তদারকিতে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।

বৈঠকে অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টাকা ছাপিয়ে ধার নেওয়া একেবারে বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ ও সরকারি কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বন্ধ করা হয়েছে।

গভর্নর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দায়িত্ব আর্থিক ও মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আমরা এ জন্য কাজ করছি। অর্থ পাচার খুবই খারাপ আকার ধারণ করেছিল। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বন্ধ করা হয়েছে। সব ধরনের ঋণপত্রের মূল্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।

“হুন্ডির চেয়ে ১০ গুণ বেশি অর্থ পাচার হয়েছে বাণিজ্যের আড়ালে। ১০০ ডলারের পণ্য আনতে ৩০০ ডলার পাঠানো হয়েছে। দুবাইতে ১৩ হাজার কোম্পানি খুলেছে বাংলাদেশিরা, প্রতিজন ৫ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করেছে। পর্তুগালে আড়াই হাজার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছে। প্রত্যেকে ৫ লাখ ইউরো করে বিনিয়োগ করেছে। এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে।”

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সাংবাদিক বলেন, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। আবার একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে উল্লেখসংখ্যক ব্যাংক। আবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। এতে আর্থিক খাতের ওপর মানুষের একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “একটি গোষ্ঠীর হাতে কতগুলো ব্যাংক থাকবে, আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আইনে নতুন বিধান যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।”

“খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে আমরা খুবই কঠোর। ঋণ চারবার পুনঃ তফসিলের পর মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই বছরে সবচেয়ে কম পরবর্তী

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই বছরে সবচেয়ে কম

কমেন্ট