পাগলা ঘোড়ার মতো ছুঁটছে ডলার, খোলাবাজারে ১২৭ টাকা
কিছুদিন ধরেই খোলাবাজারে ডলারের দর বাড়ছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রতি ডলার ১২০ টাকা ছাড়ায়। বুধবার বিক্রি হয় ১২২ থেকে ১২৩ টাকায়। বৃহস্পতিবার এক লাফে বেড়ে তা ১২৬ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে।
খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর পাগলা ঘোড়ার মতো ছুঁটছে। এক দিনের ব্যবধানেই ডলারের দর বেড়েছে সাড়ে ৪ টাকা।
কিছুদিন ধরেই খোলাবাজারে ডলারের দর বাড়ছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রতি ডলার ১২০ টাকা ছাড়ায়। বুধবার বিক্রি হয় ১২২ থেকে ১২৩ টাকায়। বৃহস্পতিবার এক লাফে বেড়ে তা ১২৬ টাকায় উঠেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কার্ব মার্কেটে ডলারের দর এত উচ্চতায় ওঠেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মতিঝিলের এক ডলার ব্যবসায়ী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমরা আজকে ১২৬ টাকায় ডলার কিনেছি; বিক্রি করেছি ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৭ টাকায়।”
হঠাৎ করে ডলারের দাম কেনো এত বাড়ল-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ডলারের বাজারে নানা ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। গতকাল (বুধবার) পত্রিকায় খবর এসেছে ব্যাংকগুলো ১২৪ টাকায় রেমিটেন্স সংগ্রহ করছে। সেই খবরে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দর বেড়ে গেছে।”
‘অস্থির’ ডলারের বাজার ‘সুস্থির’ করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। দিন যতো যাচ্ছে, পরিস্থিতি ততোই খারাপ হচ্ছে।
গত সপ্তাহেও খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৮ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ছিল। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ১২০ টাকা ছাড়ায়। বুধবার বিক্রি হয় ১২২ থেকে ১২৩ টাকায়।
ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ১২৪ টাকা দরে ডলার কেনার খবর বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই খবরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৬ টাকায় বিক্রি হয়। দিন শেষে ১২৭ টাকাতেও বিক্রি হয়।
ডলার সঙ্কটের এ সময়ে দর নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) মাধ্যমে দর ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এবিবি ও বাফেদার নির্ধারিত দর রয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর বিক্রির দর নির্ধারিত আছে ১১১ টাকা।
বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ১১১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে এই দরে ডলার কেনাবেচা করছে।
তবে ব্যাংকগুলো এর চেয়ে ৩/৪ টাকা বেশি দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ১১৩ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে।
বেসরকারি সিটি ও ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) ১১৪ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছে, তা-ও এই দরে বিক্রি করছে।
পৌনে দুই বছর ধরে অর্থাৎ রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই ছুঁটেছে ডলার; কমছে টাকার মান। অর্থাৎ দুর্বল হচ্ছে টাকা। শক্তিশালী হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে। তার আগে জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৬ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই সময় আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ২৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।
তারও আগে প্রায় দেড় বছর ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খোলাবাজারেও ডলারের দর বেড়েছে। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়ায়। এর পর ছুঁটতে ছুঁটতে ১০ আগস্ট ১২০ টাকায় উঠেছিল।
এর পর এক বছরের বেশি সময় ১১১ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে ডলারের দর ১১৫ টাকা ছাড়ায়। এর পর থেকে বাড়ছেই।
কমেন্ট