ডলারের চাহিদা কমেছে, শিগগিরই সংকট কেটে যাবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডলার সংকট কেটে যাবে। সেইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন
ব্যাংকগুলো কেনা ও বেচার ক্ষেত্রে ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর এই সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডলার সংকট কেটে যাবে। সেইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, “চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়। ডলার খরচ হয় সেবা ও পণ্য ক্রয় এবং ঋণ ও বিদেশি দায় মেটাতে।
“এখন আমদানি মূল্য তদারক করা হচ্ছে। ফলে সঠিক পরিমাণে ডলার খরচ হচ্ছে। এতে ডলারের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে বিদেশি দায়ও কমে এসেছে। ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ আসবে, যাতে রিজার্ভ বাড়বে। এ কারণে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তটি সঠিক ও সময়োপযোগী।” এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হয়।
প্রায় দুই বছর পর ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। বৃহস্পতিবার থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি আমদানিকারকের কাছে বিক্রিতেও ডলারের দাম কমেছে ৫০ পয়সা।
বুধবার সন্ধ্যায় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) এক সভায় ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা, আগে যা ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেওয়া যাবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা, আগে যা ছিল ১১১ টাকা।
তবে প্রবাসী আয়ে সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও একই পরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা প্রণোদনা পাবেন উপকারভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, গত বছরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের দায় ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি (১৬ বিলিয়ন) ডলার, এখন যা কমে হয়েছে ৬৯০ কোটি (৬.৯ বিলিয়ন) ডলার। পাশাপাশি বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট-বিওপি) ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে।
“এখন ঋণপত্র খোলা হচ্ছে তাৎক্ষণিক ডলার পরিশোধের মাধ্যমে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে ডলারের চাহিদার চেয়ে জোগান এখন বেশি। ফলে বাফেদার সিদ্ধান্তটি সঠিক।”
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, “আমাদের বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার আছে। পক্ষান্তরে সংকটেও রয়েছে কিছু ব্যাংক। এসব ব্যাংকের গ্রাহক চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে অন্য ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ কারণেই কখনো কখনো অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে ডলারের বাজারে।”
কতগুলো ব্যাংক সংকটে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২১ ব্যাংকের ডলার সংকটে আছে। এর বিপরীতে ৩৯ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার মজুত আছে।”
তবে ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করেননি মেজবাউল হক।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকার তার প্রয়োজনে ডলার নেয়। প্রয়োজন হলে দেশের স্বার্থে সেটা দিতেই হবে। বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “দেশে ডলার খরচের মূল খাত হলো দুটি। আমদানি মূল্য পরিশোধ করা এবং অন্যটি সেবামূল্য পরিশোধ। দুই জায়গাতেই আমরা চাহিদা কমাতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের ডলার পরিশোধের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।”
তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ডলার সংকটের পাশাপাশি দেশের মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে বলে আশার কথা শোনান মেজবাইল হক।
কমেন্ট