কৃষি ঋণের সুদহার ১০% ছাড়াল

কৃষি ঋণের সুদহার ১০% ছাড়াল

কৃষি ঋণের সুদ হার বেড়ে ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন থেকে কৃষি ও পল্লী ঋণের জন্য ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ সুদ দিতে হবে।

সোমবার এক সার্কুলার জারি করে এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষিতে তা হ্রাস করার লক্ষ্যে নিচের দুটি নির্দেশনা পরিপালনীয় হবে—

>> ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’(সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল)  এর সাথে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

এবং

>> প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’এর সাথে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডরার ঋণ পেতে সংস্থাটির দেওয়া শর্ত মেনে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে এই ‘স্মার্ট’সুদহার করিডোর চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সুদহার নির্ধারণে নতুন এই পদ্ধতি অনুযায়ী, বর্তমানে ‘স্মার্ট’সুদহার ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এন হিসাবে এখন থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ।

অক্টোবর মাসে ‘স্মার্ট’সুদহার ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

তার আগের দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই হার ছিল একই ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক।

সেই হিসাবেই চলতি নভেম্বর মাস থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। নভেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।

ওদিকে রোববার মূল্যস্ফীতি কমাতে সব ধরনের নীতি সুদহার আরেক দফা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ধারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত রেপো ও স্পেশাল রেপোর সুদহার ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৭৫ এবং ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

গত মাসে উভয় ক্ষেত্রে শতাংশীয় ৭৫ পয়েন্ট বাড়ানো হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চার দফায় বাড়ল ২ শতাংশীয় পয়েন্ট। গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়াতে স্মার্ট রেটের সঙ্গে মার্জিনের হার সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলন করে নীতি সুদহার পরিবর্তনের এ সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে সার্কুলারও জারি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চলমান সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাইরে তিন অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে গঠিত মুদ্রানীতি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত জুন পর্যন্ত সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯ শতাংশ।

নতুন ব্যবস্থা চালুর পর থেকে সুদহার একটু একটু করে বাড়ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধার নেওয়ার সুদহার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি বছর এ নিয়ে রেপো ও স্পেশাল রেপোর সুদহার চার দফায় ২ শতাংশীয় পয়েন্ট করে বাড়ানো হলো। আর রিভার্স রেপো তথা ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা রাখার সুদহার এ দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এ ক্ষেত্রে সুদ বাড়ল ১ দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার দ্রুত বেড়ে এরই মধ্যে ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এতে করে সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল আরও বাড়বে। একই সঙ্গে স্মার্টের সঙ্গে বিদ্যমান মার্জিনের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হবে। দুইয়ে মিলে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার ১২ শতাংশের কাছাকাছি উঠতে পারে।

চলতি মাস অক্টোবরে যা ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিময় হার বাজারমুখী করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে রেপো ও স্পেশাল রেপোর ব্যবহার হয়। বর্তমানে ব্যাংকগুলো প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার নিচ্ছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, “চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য সুদহার ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। এতে করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কম হবে। শুরুতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হলেও এখন তা সাড়ে ৬ শতাংশের আশপাশে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

“কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার খরচ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকগুলো আমানত বাড়ানোর ওপর জোর দেবে। এ ক্ষেত্রে আমানতের সুদহার আরও বাড়বে। তখন মানুষ ব্যাংকে বেশি টাকা রাখবে। এভাবে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

নির্বাচনের আগে এভাবে সুদহার বৃদ্ধি ব্যাংক থেকে টাকা বের করা ঠেকাতে পারবে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে হাবিবুর রহমান বলেন, “সুদহার বাড়লে স্বাভাবিকভাবে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমে।”

ফেরত না দেওয়ার উদ্দেশ্যে যারা ঋণ নেন, তাদের কাছে সুদহার কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ক্ষেত্রে কী করবে– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ফেরত না দেওয়ার উদ্দেশ্যে ঋণ না নেওয়ার কোনো সুযোগ ব্যাংকিং সিস্টেমে নেই। কেউ এমন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে।”

মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।

গত তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংক ঋণের সুদহার সাড়ে ১১ শতাংশে উঠল পূর্ববর্তী

ব্যাংক ঋণের সুদহার সাড়ে ১১ শতাংশে উঠল

সুদহার আরও বাড়ল, আমানত ও ঋণের সুদও বাড়বে পরবর্তী

সুদহার আরও বাড়ল, আমানত ও ঋণের সুদও বাড়বে

কমেন্ট