কল মানি রেট ৯.৬ শতাংশে উঠল, ১২ বছরে সর্বোচ্চ
রোববার ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকার কল মানির মধ্যে ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকাই নেওয়া হয়েছে এক দিনের জন্য। এই ধারের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৭ কোটি টাকার ধার ছিল সাত দিনের জন্য, এর গড় সুদহার ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
কলমানির সুদের হার ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কল মানিতে এক দিনের জন্য টাকা কর্জ বা ধার দেওয়ার ক্ষেত্রে গড় সুদের হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে উঠেছে।
২০১২ সালের পর এটিই কল মানির সর্বোচ্চ সুদহার। ওই বছর ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে উঠেছিল সুদহার।
হঠাৎ কল মানির সুদহার বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে ব্যাংকাররা বলছেন, বেশ কিছু ব্যাংক বর্তমানে তারল্য-সংকটে ভুগছে। এ কারণে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অন্য ব্যাংক থেকে কল মানি (ধার বা কর্জ) নিতে হয়েছে। তাতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুদহার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রোববার কল মানিতে ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকা ধার নেয় ব্যাংকগুলো। এই চাহিদার ফলে কল মানি বাজারে গড় সুদহার পৌঁছায় ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে।
কল মানি হচ্ছে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের টাকা ধার নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় দৈনন্দিন ও স্বল্প মেয়াদে টাকার চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে।
যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকে, তারাই মূলত ধার দিয়ে এর বিনিময়ে সুদ নেয়। সুদের হার নির্ভর করে কত দিনের জন্য টাকা ধার নেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। আবার কখনো কখনো চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করেও সুদহার ওঠানামা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে কল মানি দেওয়া হয়।
কল মানিতে এক দিন থেকে শুরু করে ১৮২ দিনের জন্যও টাকা ধার নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সময়ের জন্য যে ধার দেওয়া হয়, সেটাকে মেয়াদি ধার বলা হয়। আর ১ থেকে ১৪ দিনের জন্য যে অর্থ ধার করা হয়, সেটাকে বলা হয় স্বল্পমেয়াদি ধার।
ব্যাংকগুলো এখন স্বল্পমেয়াদি ধারই বেশি করছে কল মানিতে। যত বেশি দিনের জন্য ধার, সুদহার তত বেশি হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রোববার ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকার কল মানির মধ্যে ৩ হাজার ২৫১ কোটি টাকাই নেওয়া হয়েছে এক দিনের জন্য। এই ধারের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৭ কোটি টাকার ধার ছিল সাত দিনের জন্য, এর গড় সুদহার ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
গত বছরের শুরু থেকে কল মানিতে টাকা ধারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তাতে বছরের শুরু থেকে একটু একটু করে সুদহারও বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা নভেম্বরের মাঝামাঝি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। আর ডিসেম্বরে এসে আরেক দফা বেড়ে ৯ শতাংশে ওঠে।
বছরের শুরু থেকে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তাতে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে একদিকে কমেছে সঞ্চয়, অন্যদিকে অনেকে সঞ্চয় ভাঙাচ্ছেন। তাতে ব্যাংকে নতুন আমানত আসা কমেছে।
এর ফলে ব্যাংক খাতে তারল্য-সংকট দেখা দেয়। এ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকের ঋণসংক্রান্ত অনিয়ম। এসব ব্যাংকের সংকট পুরো খাতে প্রভাব ফেলেছে।
এ ছাড়া সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহারও বেড়েছে। যেসব ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, তারা বেশি সুদের জন্য ট্রেজারি বিলে অর্থ লগ্নি করছে। ফলে বাজারে ধার দেওয়ার মতো অতিরিক্ত তারল্য কমেছে। এদিকে কিছু ব্যাংককে ধার করে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। তাতেই বেড়েছে কল মানির সুদহার।
কমেন্ট