‘নতুন রোডম্যাপ ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাবে না’

‘নতুন রোডম্যাপ ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাবে না’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, "আমি এর আগে দুটি ব্যাংকিং সংস্কারের সাথে জড়িত ছিলাম, তাই আমি সেগুলো এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কে অবগত, কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংকিং আইনে এর অন্তর্ভুক্তি রোধ করেছে।”

ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন রোডম্যাপ কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ সাবেক তত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, “ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো কাজে আসবে না।”

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর পঞ্চম সংস্করণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “সংস্কার ব্যর্থতায় ব্যাংকিং খাত আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং সংস্কারের রোডম্যাপ নতুন কিছু নয়, তবে এটি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা এই খাতকে ব্যথিত করেছে।”

তিনি বলেন, "আমি এর আগে দুটি ব্যাংকিং সংস্কারের সাথে জড়িত ছিলাম, তাই আমি সেগুলো এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কে অবগত, কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠী ব্যাংকিং আইনে এর অন্তর্ভুক্তি রোধ করেছে।”

"পূর্ববর্তী প্রবিধানে কী অভাব ছিল তা আমরা জানি না, তখন বাস্তবায়ন করা কঠিন ছিল। নতুন রোডম্যাপ বাস্তবায়ন সহজ হবে—এটা আমি মনে করি না।”

বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সুপারিশ অনুসরণ করা সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।”

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃদপিণ্ডের মতো কাজ করে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এর আগেও এরকম রোডম্যাপ ছিলো। আগের রোডম্যাপ থেকে কেনো সরে আসলাম, তা না জেনে নতুন রোডম্যাপ করে কোনো লাভ হবে না।”

তিনি বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো নেই। পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক লেনদেনের তথ্য আরও ডিসক্লোজার হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধানগুলো খুবই জরুরি। এসব বিধিবিধানে অনেক সংশোধন হয়েছে। এগুলোর ইতিহাস জানা খুবই জরুরী।

“স্পন্সর ডিরেক্টরেরা অনেক শক্তিশালী হয়। স্পন্সর ডিরেক্টর কি পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, এক পরিবার থেকে কতজন পরিচালক থাকবে এবং তাদের মেয়াদে কত বছর হবে সে সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ, এসব বিষয়ে বিস্তারিত না জানলে বোঝা যাবে না।”

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “প্রথম ব্যাংক রিফর্মস কমিটি গঠন করা হয় ১৯৯৭ সালে। তখন ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে একটি মিটিং করেছিলাম। সেই সময় তারা নিজেদের ব্যাংক থেকে ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছিলো। এসব ঋণের অধিকাংশ ছিলো খেলাপি।”

“তখন এসব ব্যাংক মালিকেরা বলেছিলো- ‘অনেক কষ্ট করে ও অর্থ ব্যয় করে ব্যাংক চালু করেছি, এখন আমরা ঋণ নিতেও পারবো না। কষ্ট করেছি তাই ঋণ নিচ্ছি আমরা।”

“তবে সেখান থেকে ব্যাংক খাত বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এখন ৩ শতাংশ ঋণ নিতে পারছে ব্যাংক মালিকেরা। তাও দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ব্যাংক মিলিয়ে ৩০ শতাংশ ঋণ নিচ্ছে।”

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বর্তমানে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে মার্জ করে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর দায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক নেবে না। যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উপর দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, সেটি সম্ভব হতে পারে।”

“কয়েকটি কেলেঙ্কারি হওয়া বড় ব্যাংকে আমানতে ভাটা পড়েনি। কারণ কোনো ব্যাংকে বড় ধরনের কেলঙ্কারি হলে সেদিকে আমানতকারীরা খেয়াল রাখে না। তবে যেসব ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না, তাদের দরকার নেই।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ব্যাংক খাতে আগে ঋণ অবলোপন করা হতো তিন বছরে। এখন সময় আরও কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। সুযোগ থাকলে ৬ মাসের মধ্যে ঋণ অবলোপন করে ফেলবে। কারণ অবলোপন করলে ব্যালেন্স শিট থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যাবে। তখন ব্যালেন্স শিট দেখতে একটু ভালো দেখাবে। এজন্য এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ব্যাংক দেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। নতুন ব্যাংকগুলো যদি সৃজনশীল কাজ করে তাহলে ভালো। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। আর যদি শুধু ঢাকায় শাখা খুলে বসে থাকে, সেরকম ব্যাংক দরকার নেই।”

“সব দিক বিবেচনায় দেশের ব্যাংকিং খাত এখন ‘উল্টো রথে’। অথচ বিশ্বের অনেক দেশে খেলাপি হলে তিনি নানা প্রতিবন্ধকতায় মারা যান। ঋণ খেলাপি বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন না, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন না, সামাজিতভাবেও নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। আর আমাদের এখানে ঋণ খেলাপি মহা আনন্দে থাকেন।

“তথ্য-উপাত্তে অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। ইপিবির তথ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা রপ্তানির তথ্যে মিল থাকে না। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ এক, অপরদিকে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ আরও কম। এত বিভ্রাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে,” বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সর্বজনীন পেনশন: বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের যুক্ত করতে নির্দেশ পরবর্তী

সর্বজনীন পেনশন: বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের যুক্ত করতে নির্দেশ

কমেন্ট