অবলোপন করা ঋণ আদায়ে ৫% প্রণোদনা
আদায়কৃত অর্থের বিপরীতে বিতরণযোগ্য প্রণোদনার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ প্রধান নির্বাহী নিতে পারবেন, ৯০ শতাংশ পাবেন ওই ইউনিটের প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। ইউনিটের তত্ত্বাবধায়নে যে শাখার অবলোপনকৃত ঋণ আদায় হবে, সেই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও আনুপাতিকহারে প্রণোদনা পাবেন।
রাইট অফ বা অবলোপন করা ঋণ আদায় করতে পারলে আদায়কৃত অর্থের ৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে একটি করে ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ গঠন করতে বলা হয়েছে।
আদায়কৃত অর্থের বিপরীতে বিতরণযোগ্য প্রণোদনার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ প্রধান নির্বাহী নিতে পারবেন, ৯০ শতাংশ পাবেন ওই ইউনিটের প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। ইউনিটের তত্ত্বাবধায়নে যে শাখার অবলোপনকৃত ঋণ আদায় হবে, সেই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও আনুপাতিকহারে প্রণোদনা পাবেন।
খেলাপি ঋণ আদায়ে গতি আনতে এ নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। রবিবার সংস্থাটির ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি ‘মাস্টার সার্কুলার’ জারি করে এবং এ সংক্রান্ত পুরোনো নির্দেশনা রহিত বলে ঘোষণা করে।
নতুন নির্দেশনা জারির ১৫ দিনের মধ্যে সব ব্যাংককে এই ইউনিট গঠন করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যেসব ঋণ একটানা দুই বছর ধরে ‘মন্দ বা ক্ষতিজনক’ মানে খেলাপি অবস্থায় রয়েছে, সেসব ঋণ হিসাব অবলোপন করা যাবে। আগে এ ধরনের ঋণ তিন বছর না হওয়া পর্যন্ত অবলোপন করা যেতো না।
খেলাপি ঋণ অবলোপন করা (রাইট-অফ) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে আদায় হচ্ছে না এমন খেলাপি ঋণ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে স্থিতিপত্র (ব্যালান্সশিট) থেকে বাদ দিতে পারে।
এজন্য ঋণের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের মুনাফা থেকে কর্তন করে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি আকারে জমা রাখতে হয়। মুনাফা থেকে কর্তন করা না গেলে চলতি বছরের আয় খাত থেকে কর্তন করতে হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ঋণ আদায় হলে ব্যাংক প্রভিশনের টাকা তুলে নিয়ে অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এই সুযোগ না দিলে ব্যাংকের স্থিতিপত্রের আকার বেড়ে যায়। প্রভিশন রাখার শর্ত সাপেক্ষে ঋণ অবলোপন করতে হয় বলে তা ব্যাংকের ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
২০০৩ সাল থেকে দেশের ব্যাংকগুলোকে ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রথম জারি হয় ২০১৯ সালে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ওই নীতিমালা কিছুটা সম্প্রসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক গোটা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য যে রোডম্যাপের ঘোষণা দিয়েছিল, তাতে ঋণ অবলোপনের পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার কথাও বলা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার নতুন নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৬ সালের জুনের মধ্যে দেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে ওই রোডম্যাপ হাতে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন নির্দেশনায় আগের মতোই ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে মামলা করার আবশ্যকতা রাখা হয়নি। এর বেশি অঙ্কের খেলাপি ঋণ অবলোপন করতে হলে অবশ্যই মামলা করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিটের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রধান নির্বাহীর দুই ধাপ নীচে নন এমন একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে ওই ইউনিটের প্রধান করতে হবে। এই ঋণ আদায়ের কর্মদক্ষতা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর পুনঃনিয়োগের মূল্যায়নে বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোটা ব্যাংক খাতে অবলোপনকৃত ঋণ ছিল ৫০ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা কমে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায় নেমে আসে, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ।
কমেন্ট