ব্যাংকের এমডি নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল

ব্যাংকের এমডি নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্যানেল

ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের শাপলা চত্বর। ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগের জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কমিটি এমডি বা সিইও নিয়োগের আগে প্রত্যেকের দক্ষতা ও উপযুক্ততা যাচাই করবে।

প্রথমবারের মত গঠিত এ কমিটির সভাপতি ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। কমিটিতে রয়েছেন দুই নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন ও নুরল আমীন এবং পরিচালক হারুন অর রশীদ।

রোববার এ বিষয়ে এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ‘‘ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ ও পুন:নিয়েগের পূর্বে যোগ্যতা ও উপযুক্ততা মূল্যায়ণে এ কমিটি ঘোষণা করা হল।“

এ কমিটির কাজ হবে, ব্যাংক মনোনীত ব্যক্তির যোগ্যতা, উপযুক্ততা, দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার, অভিজ্ঞতা, বয়স ও নেতৃত্বের গুণাবলীর বিষয়াদি যাচাই করা।

কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যর বিষয়ে এতে বলা হয়, “ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত করা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ বা পুনঃনিয়োগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণপূর্বক ঋণ শৃঙ্খলা উন্নতি, উৎকর্ষতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন সর্বোপরি আমানতকারীদের আস্থা এবং গ্রাহক সেবা বৃদ্ধিতে তার (নিয়োগ প্রত্যাশী) কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহিত হওয়া আবশ্যক।”

কমিটির সদস্য কারা হবেন তার শর্ত নির্ধারণ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কমিটির সভাপতি হবেন ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি গভর্নর (ডিজি), ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক এবং ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশনের (ডিওএস) দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক এবং সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ডিভিশন-২ এর পরিচালক।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের।

কারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে পারবেন না, তা ব্যাংক কোম্পানি আইনেই বলা আছে। এসব শর্ত যথাযথ মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়।

আমানতকারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকে। এই চর্চার মধ্যে দিয়ে যেতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ‘ফিটটেস্ট (যোগ্যতা যাচাই)’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।

এতদিন তা শুধু কাগুজে প্রমাণাদির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নানা সমালোচনার মধ্যে দিয়ে যাওয়া ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিস্তারিত নীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করবে।

কমিটির কর্ম পরিধি

>> ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দিতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আকারে পাঠানো ব্যক্তির সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ, সময় ও স্থান ঠিক করে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে জানানো।

>> প্রার্থীর দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, বয়স ও নেতৃত্বের গুণাবলীর বিষয়াদি যাচাই।

>> প্রার্থীর ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ পূর্বে কোনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকলে সে সময়ের কর্মকদক্ষতা মূল্যায়ন।

>> সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণপূর্বক ঋণ শৃঙ্খলা, উন্নতি, উৎকর্ষতা, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন সর্বোপরি আমানতকারীদের আস্থা এবং গ্রাহক সেবা বৃদ্ধিতে মনোনীত ব্যক্তি কীভাবে অবদান রাখবেন সে সম্পর্কে তাঁর নিজের স্বাক্ষরিত কর্মপরিকল্পনার মূল্যায়ন।

>> ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে এ কমিটির ইতিবাচক সুপারিশের ভিত্তিতে নিযুক্তি বা পুনঃনিযুক্তির অনুমোদন প্রদান করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এবং

>> ব্যক্তির যোগ্যতা, উপযুক্ততা, দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার, অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের গুণাবলীর বিষয় কমিটির নিকট ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য মর্মে বিবেচিত না হলে নিয়োগের অনুমোদন না দেয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে অবহিত করবে।

ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ ছাড়াল পরবর্তী

ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ ছাড়াল

কমেন্ট