দুর্বল-সবল ব্যাংক নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্যে কান না দেওয়ার পরামর্শ

দুর্বল-সবল ব্যাংক নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্যে কান না দেওয়ার পরামর্শ

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।

দেশে ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে দুর্বল-সবল ব্যাংক নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন আমানতকারীরাও।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ব্যাংকের দুর্বলতা-সবলতা নির্ণয়ে কেবল একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত মূল্যায়ন শুরু হবে আগামী বছরের মার্চে। ফলে এর আগেই কোনও ধরনের জল্পনা-কল্পনায় কান না দেওয়ার পরামর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ (কর্মপরিকল্পনা) গ্রহণ করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক একীভূত করার মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যেই আমরা দেখেছি বেশ কিছু অনুমান নির্ভর তথ্য বাজারে এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। যেখানে আমানতকারীদের কী হবে বা ভালো ব্যাংকগুলোর কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্জার অ্যান্ড এক্যুজিশনের জন্য প্রম্পট কারেকশন অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক করে দিয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্র বলেন, “এই ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের তথ্য দিলেই বোঝা যাবে কোন ব্যাংক দুর্বল এবং কোন ব্যাংক সবল। এটাও আমরা মূল্যায়ন শুরু করব আগামী বছরের মার্চ থেকে।

“তবে কোনো ব্যাংক যদি নিজে থেকে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই তা করতে হবে। এরপর স্বেচ্ছায় একীভূত করার আর সুযোগ থাকবে না। তখন পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণের কাজ শুরু করবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করে কোন পদ্ধতিতে ও কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যাংক একীভূত করা হবে, তা নিয়ে নীতিমালা তৈরি করা হবে।

তবে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের স্বার্থ পুরোপুরিভাবে সুরক্ষিত থাকবে বলে উল্লেখ করেন মেজবাউল হক। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থও দেখা হবে বলে জানান।

তিনি বলেন, “ব্যাংক একীভূত হলে তা হবে যথাযথ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। একীভূত হলে ভালো ব্যাংক যাতে দুর্বল না হয় ও দুর্বল ব্যাংক যাতে ভালো হয়—এ দুটিই দেখা হবে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা একটি তালিকা সম্প্রতি কিছু সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সে বিষয়েও কথা বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র।

তিনি বলেন, “এটা ব্যাংকের স্বাস্থ্য বোঝানোর কোনও নিশ্চিত তথ্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ নানা সময়ে ব্যাংকের তালিকা করে থাকে। একেকটি তালিকা একেকটি কাজে ব্যবহার করা হয়। এর যে কোনও একটি দিয়েই যে ব্যাংকের পুরো স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করা যাবে বিষয়টি এমন নয়। ব্যাংকের স্বাস্থ্য দেখার স্বীকৃত রেটিং ক্যামেলস রেটিং নামে পরিচিত। যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনো প্রকাশ করে না। এটা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।”

ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে, এমন আলোচনার মধ্যে ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে।

ওই বৈঠকের আলোচনার বিষয়েও সেসময় ব্রিফ করে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে বলা হয়, বৈঠকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের জানানো হয়, চলতি বছরের মধ্যে সাত থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংক সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে।

ওই বৈঠকে আরও জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদ (ঋণ) কিনে নেবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (এএমসি)। ফলে একীভূত হওয়ার কারণে ভালো ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালকেরা ভালো ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা বিদেশ ভ্রমণসহ যা যা করতে পারবে না পরবর্তী

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা বিদেশ ভ্রমণসহ যা যা করতে পারবে না

কমেন্ট