একীভূত হচ্ছে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক

একীভূত হচ্ছে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক

দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে সবল ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগের পর এটিই প্রথম একীভূত হওয়ার ঘটনা।

দুর্বল পদ্মা ব্যাংক ও সবল এক্সিম ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আলাদা আলাদা সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

আগামী সোমবার) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবে।

দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে সবল ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগের পর এটিই প্রথম একীভূত হওয়ার ঘটনা।

এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ব্যাংকের (এক্সিম) একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।”

কীভাবে এই ব্যাংক দুইটি একীভূত হবে, দায়-দেনা কীভাবে সমন্বয় হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও পরামর্শক্রমে দুই ব্যাংকের আইনজীবী মিলে ঠিক করবেন বলেও জানান তিনি।

“এ জন্য আগামী সোমবার একটি সমঝোতা চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই চুক্তির পর একীভূত কার্যক্রমের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে,” যোগ করেন এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

যেসব ব্যাংক নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হবে তাদের ‘জোর করে’ একীভূত করা শুরু হবে আগামী বছরের মার্চ থেকে।

গত ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক আলোচনাতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে সবল ও দুর্বল ব্যাংকের এমডিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুরও পরামর্শ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

এর পরপরই গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই রোডম্যাপের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে কর্মপরিকাল্পনা নেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, একীভূত হওয়া কোনও ব্যাংকের কর্মীদের প্রথম তিন বছরে ছাঁটাই করা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদাভাবে দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করার আগে থেকেই পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার দুগর্তির তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যাংকটিকে এখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকের একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি ব্যাংকটি তাদের কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে ওই আমানতকে শেয়ারে রূপান্তরের প্রস্তাব দেয়।

এর কয়েক দিনের মাথায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদত্যাগ করেন। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে পদ্মা ব্যাংকের এই দুর্বলতা আজকের নয়। ২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কয়েক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ব্যাংকটির পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। নাম বদলে করা হয় পদ্মা ব্যাংক। ২০১৭ সালে এ ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারি একাধিক ব্যাংক ও সংস্থা।

ইসলামিক ধারার এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৪ সালে এটি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়ে হয় ১০ টাকা। তা আগের দিন ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ব্যাংকটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিদেশি দশমিক ৭৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার।

দুর্বল-সবল ব্যাংক নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্যে কান না দেওয়ার পরামর্শ পরবর্তী

দুর্বল-সবল ব্যাংক নিয়ে অনুমাননির্ভর তথ্যে কান না দেওয়ার পরামর্শ

কমেন্ট