মোবাইলে প্রতিদিন ৪৩১৪ কোটি টাকা লেনদেন

মোবাইলে প্রতিদিন ৪৩১৪ কোটি টাকা লেনদেন

বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। অথচ সবার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি যে আর্থিক লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হবে, তা এক যুগ আগে সম্ভবত কারও কল্পনায় ছিল না।

আর এখন হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠেছে সব ধরনের লেনদেনের অপরিহার্য মাধ্যম। এসব লেনদেনের হিসাব খুলতে কোথাও যেতে হচ্ছে না। গ্রাহক নিজেই অনায়াসে নিজের হিসাব খুলে লেনদেন করতে পারছেন।

মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকিট কেনাসহ কত সেবা যে মিলছে, তা এক দমে বলা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।

এসব সেবায় ২০২৪ সালেল প্রথম মাস জানুয়ারিতে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এর আগে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত বছরের জুনে।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।

এভাবেই বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত অক্টোবর মাসে দেশে মোবাইল ফোনে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে মোবাইল ফোনে এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত জুন মাসে মোবাইলের মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ওই মাসে দৈনিক গড় লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৪ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা।

একক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে গত বছরের এপ্রিল মাসে—এক লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে—৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে চার গুণেল বেশি।

লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গ্রাকহ সংখ্যা। পাঁচ বছর আগে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। জানুয়ারিতে সেই গ্রাহক প্রায় তিন গুণ বেড়ে প্রায় ২২ কোটি ছুঁয়েছে।

এভাবেই ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। কেবল টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে প্রতি মুহূর্তে গতি সঞ্চার করে চলেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ প্রবাসী-আয় বা রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন অন্যতম পছন্দের মাধ্যম।

প্রতিদিন নতুন নতুন সেবা যোগ হচ্ছে। এই সেবার হাত ধরেই দেশে আসছে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও ডাক বিভাগের মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ ‘ডিজিটাল ব্যাংক’প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে।

এছাড়া প্রায় সব ব্যাংকও ‘ডিজিটাল ব্যাংক’নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ।

পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।

এখন মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যম না। এর ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের লেনদেনে। বিশেষ করে পরিষেবা বিল পরিশোধ, স্কুলের বেতন, কেনাকাটা, সরকারি ভাতা, টিকিট ক্রয়, বিমার প্রিমিয়াম পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ ও অনুদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা করতে এখন আর এজেন্টদের কাছেও যেতে হচ্ছে না। ব্যাংক বা কার্ড থেকে সহজেই টাকা আনা যাচ্ছে এসব হিসাবে। আবার এসব হিসাব থেকে ব্যাংকেও টাকা জমা শুরু হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড বা সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তিও জমা দেয়া যাচ্ছে। এর ফলে একটি মুঠোফোনই যেন একেকজনের কাছে নিজের ব্যাংক হয়ে উঠেছে।

এমএফএস লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মোবাইল আর্থিক সেবা দেশের মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনকে প্রযুক্তিনির্ভর করে সহজ, নিরাপদ এবং তাৎক্ষণিক করেছে।”

“সামগ্রিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের ওপর যার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশে ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্যাশলেস সমাজ নির্মাণেও এই খাত ভূমিকা রাখবে,” বলেন বিকাশ প্রধান।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি এখন এমএফএস। শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার পাশাপাশি নতুন নতুন নানা সেবা যোগ করে দেশের সব মানুষের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই সেবা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সেবার ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। তাইতো বাড়ছে গ্রাহক ও লেনদেনের অঙ্ক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২২ হাজার ৯১১। কিন্তু দেশে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) গ্রাহক এখন প্রায় ২২ কোটি। এর কারণ, একজন গ্রাহক একাধিক সেবায় হিসাব খুলতে পারেন।

এক্সিম-পদ্মা মিলবে যেভাবে পরবর্তী

এক্সিম-পদ্মা মিলবে যেভাবে

কমেন্ট