পদ্মা-এক্সিম সমঝোতা চুক্তি সই, চলবে এক্সিম নামে

পদ্মা-এক্সিম সমঝোতা চুক্তি সই, চলবে এক্সিম নামে

ব্যাংক একীভূত করা হলেও কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারাবেন না। তবে পদ্মা ব্যাংকের কোনও পরিচালক এক্সিম ব্যাংকের পরিচলনা পর্ষদে থাকবেন না।

পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূত হওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। সোমবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এমওইউ সই হয়।

পরে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে পদ্মা ব্যাংক নামে আর কোনও ব্যাংক থাকছে না। একীভূত হয়ে এক্সিম ব্যাংক নামে চলবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত করা হলেও কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি হারাবেন না। তবে পদ্মা ব্যাংকের কোনও পরিচালক এক্সিম ব্যাংকের পরিচলনা পর্ষদে থাকবেন না।

আপাতত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়েও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে নজরুল বলেন, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকই দায়িত্ব পালন করবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফজাল করিম।

পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে সরকারের কোনও চাপ ছিল না জানিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, “তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা ছিল। আমরা এটা করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। পদ্মাকে একীভূত করা হলেও আমানতকারীদের কোনও সমস্যা হবে না, সবাই নিরাপদে থাকবেন।”

 “আমরা এক্সিম ব্যাংক এগিয়ে এসেছি পদ্মা ব্যাংক টেকওভার করতে। আমরা একত্রিত হয়েছি মার্জার করতে, একুইজিশন নয়। পদ্মা ব্যাংক সম্পর্ণূরূপে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মিলিত হয়ে গেছে। পদ্মা ব্যাংকের আর অস্তিত্ব থাকল না। পদ্মা ব্যাংকের সকল দায় দেনা এক্সিম ব্যাংক পরিশোধ করবে।”

এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আগামী এক মাসের মধ্যে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বললেও এ কাজে আরো বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আফজাল করিম, যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, “পদ্মা ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার করতে নীতিগত সিদ্ধান্তের পর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হল। এখন তিন থেকে ছয় মাস লাগবে একীভূত হতে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, “এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক পরস্পরের সমঝোতার ভিত্তিতে একীভূত হতে এমওইউ করল। এখন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবে মার্জার করতে। এরপর নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমরা অডিট করব, দায় দেনা ঠিক করা হবে।”

“এখন কেবল এই দুটি ব্যাংকের মধ্যে এমওইউ হয়েছে। এরপর তারা আমাদের কাছে আবেদন করবে। তারপর এই দুই ব্যাংকের দায়-দেনা হিসাবায়নের জন্য অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। এর পর কয়েকটি আইনগত প্রক্রিয়া শেষে একীভূত সম্পন্ন হবে।”

স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্জার প্রক্রিয়া শেষ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতা করবে বলে মুখপাত্র জানান।

এ প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট না করে মেজবাউল হক বলেন, দুই ব্যাংক আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার পর নতুনভাবে কার্যক্রম চালাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেদিন অনুমোদন দেবে, সেদিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে মার্জার কার্যকর হবে।

গত ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে।

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক আলোচনাতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে সবল ও দুর্বল ব্যাংকের এমডিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুরও পরামর্শ দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

এর পরপরই গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানোর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই রোডম্যাপের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে কর্মপরিকাল্পনা নেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, একীভূত হওয়া কোনও ব্যাংকের কর্মীদের প্রথম তিন বছরে ছাঁটাই করা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদাভাবে দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করার আগে থেকেই পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার দুগর্তির তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যাংকটিকে এখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকের একটি হিসেবে ধরা হয়। কারণ সম্প্রতি ব্যাংকটি তাদের কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পেরে ওই আমানতকে শেয়ারে রূপান্তরের প্রস্তাব দেয়।

এর কয়েক দিনের মাথায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদত্যাগ করেন। সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে পদ্মা ব্যাংকের এই দুর্বলতা আজকের নয়। ২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া ফারমার্স ব্যাংক বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় কয়েক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর ব্যাংকটির পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। নাম বদলে করা হয় পদ্মা ব্যাংক। ২০১৭ সালে এ ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারি একাধিক ব্যাংক ও সংস্থা।

ইসলামিক ধারার এক্সিম ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৪ সালে এটি দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়ে হয় ১০ টাকা। তা আগের দিন ছিল ৯ টাকা ৯০ পয়সা। এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ব্যাংকটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালক ৩২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, বিদেশি দশমিক ৭৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার।

মোবাইলে প্রতিদিন ৪৩১৪ কোটি টাকা লেনদেন পরবর্তী

মোবাইলে প্রতিদিন ৪৩১৪ কোটি টাকা লেনদেন

কমেন্ট