ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছেই, সাড়ে ১৩% ছাড়াল

ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ছেই, সাড়ে ১৩% ছাড়াল

এখন ব্যাংক থেকে ১০০ টাকা ঋণ নিতে বছরে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। এপ্রিল মাসে নতুন করে ঋণ নিলেই কেবল এই সুদহার প্রযোজ্য হবে।

ব্যাংক ঋণের সুদহার বেড়েই চলেছে। নতুন ঋণের ক্ষেত্রে এপ্রিল মাসে ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার হবে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের মাস মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বড় অংকের ঋণের ক্ষেত্রে এই স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ হিসাবে এপ্রিল মাসে ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত জুলাই মাসের পর এটাই হবে ঋণের ওপর সর্বোচ্চ সুদহার।

অর্থাৎ এখন ব্যাংক থেকে ১০০ টাকা ঋণ নিতে বছরে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ সুদ দিতে হবে গ্রাহকদের। এপ্রিল মাসে নতুন করে ঋণ নিলেই কেবল এই সুদহার প্রযোজ্য হবে। আগে নেওয়া ঋণের সুদহার আগের মতোই থাকবে। তবে ছয় মাস পর সুদহার পূণনির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংক।

ট্রেজারি বিলের সুদ হারের ছয় মাসের গড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক এপ্রিল মাসের এই ‘স্মার্ট’ রেট হিসাব করেছে। যা রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

কটেজ, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই), ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে ভোক্তা ঋণ ও সিএমএসএমই ঋণের সুদহার হবে সাড়ে ১৪ শতাংশের বেশি—১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

মার্চে বড় অঙ্কের ঋণের সুদহার ছিল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে বড় অঙ্কের ঋণের সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

ফেব্রুয়ারিতে ‘স্মার্ট’ রেট ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।

গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এই সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই থেকে ঋণের সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করে নতুন ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মাসে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে গত ১৭ জানুয়ারি চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে সীমিত রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ঋণের ব্যয় বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর পরিকল্পনা সংস্থাটির।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ হিসাবে ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগামী জুনের মধ্যে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এই মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট বা রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।

এতে ব্যাংকগুলোর তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার খরচ বেড়েছে। তহবিল খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঋণের বিপরীতেও সুদ বাড়াতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ‘স্মার্ট’সুদহার করিডোর চালু করা হয়।

অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই সুদহার ছিল একই—৭ দমিক ১০ শতাংশ।

নিয়ম অনুযায়ী, মাস শুরুর আগের দিন আগের মাসের ‘স্মার্ট’রেট জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার থেকে এপ্রিল মাস শুরু হবে; সে হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এপ্রিল মাসের ‘স্মার্ট’ রেট প্রকাশ করা হয়েছে।

এই হার এপ্রিল মাসে দেওয়া নতুন ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য এই সুদহার কার্যকর থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, সুদ হার বাড়ায় মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা সহজ হবে। আর নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অনেক ব্যাংকেই আমানতের সুদহার বাড়াতে শুরু করেছে।

সুদহার করিডোর নীতিমালা অনুযায়ী, প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার সাধারণ ঋণের চেয়ে ১ শতাংশ কম হবে। সেক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মার্জিন যোগ হবে।

সে হিসাবে এপ্রিল মাসে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। যা মার্চে ছিল ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ।

তবে এপ্রিলে ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে ব্যাংকগুলো সুদ নিতে পারবে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কারণ সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ), ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ তদারকি বা সুপারভিশন চার্জ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সাধারণত ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ও ভোগ্যপণ্য যেমন—গাড়ি কেনার ঋণ, আবাসন ঋণ, শিক্ষা ঋণসহ ফ্রিজ, টিভি কম্পিউটার ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য যে ঋণ নেয়া হয় সেগুলোকে ভোক্তা ঋণ বলা হয়ে থাকে।

স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে এখন ৩% যোগ করতে হবে

বড় অংকের ঋণের ক্ষেত্রে স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে এখন সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। মার্চ মাসে যোগ করতে পারত ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। তার আগে যোগ করা যেতো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

অপরদিকে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের ক্ষেত্রে স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে এখন ২ শতাংশ সুদ যোগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা ‘ঋণ/বিনিয়োগের সুদ/মুনাফা হার’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জারি করা সার্কুলারে স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩.৫% মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি/পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২.৫% মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল।

ঋণের সুদহার মনিটারি পলিসির সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করা এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে এখন নিচের নির্দেশনা পরিপালনীয় হবে—

>> ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ এর সাথে সর্বোচ্চ ৩% মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

এবং

খ) প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ এর সাথে সর্বোচ্চ ২% মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।

এই নির্দেশনা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমডি নিয়োগ-অব্যাহতি: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মানতে হবে একই নীতি পরবর্তী

এমডি নিয়োগ-অব্যাহতি: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মানতে হবে একই নীতি

কমেন্ট