আপাতত আর কোন ব্যাংক একীভূত নয়
ব্যাংকপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের শাপলা চত্বর। ফাইল ছবি
আপাতত আর কোন ব্যাংক একীভূত করা হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক সবল পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে শেষ হওয়ার পর অন্য দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায় এরই মধ্যে পাঁচটি দূর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়েছে। আলোচনায় রয়েছে মোট ১২টি দূর্বল ব্যাংক। এ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্কের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন করে কোনো ব্যাংকের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না।
সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের জন্য দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক জারি করে। এই নীতিমালার আলোকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দূর্বল ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে এক করে দেবে।
এর মধ্যেই ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করে সেখানে কোন প্রক্রিয়ায় একীভূতকরণ সম্পন্ন হবে, একীভূতকরণ হলে সুবিধাসহ বিস্তারিত বলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে এর আগেই গত ১৮ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংক একীভূতকরণের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। এরপর একে একে সোনালীর সঙ্গে বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষির সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সিটির সঙ্গে সরকারি মালিকানার বেসিক এবং ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এছাড়া বেসরকারি খাতের এবি, আইসিবি ইসলামিক, বাংলাদেশ কমার্স, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তান একীভূতকরণের আলোচনায় রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে এসব ব্যাংক একীভূতকরণ করে দিচ্ছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো নিজ থেকেই একীভূত হচ্ছে। এ নিয়ে আমানতকারী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে দু’টি ব্যাংক এক করে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে আলোচনা–সমালোচনা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “এরই মধ্যে ব্যাংক একীভূতকরণের পাঁচটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংকের একীভূতকরণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আপাতত নতুন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। ব্যাংকগুলোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।”
তিনি বলেন, “ব্যাংক একীভূত করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। অডিটর নিয়োগ, সম্পদ ও দায় ঠিক করা, শেয়ার দর ঠিক করা, শেয়ার অংশ নির্ধারণ ও আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই পাঁচ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অভিজ্ঞতা নেব। অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন আছে। তারপর দেখা যাবে।”
ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা তুঙ্গে উঠার মধ্যেই গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূতকরণের নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেওয়া হবে।
এই নীতিমালার আওতায় কোনও এক বা একাধিক ব্যাংক অন্য কোনও ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারবে। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও অন্য কোনও ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারবে।
এছাড়া আপোষ-মীমাংসা/সমঝোতা বা বিশেষ ব্যবস্থা/বন্দোবস্তের অধীনে কোনও ব্যাংক অন্য কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট শাখা অধিগ্রহণ, দুইটি অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শাখার অদল-বদল, ব্যবসা স্থানান্তর এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে।
বিদেশি ব্যাংকের শাখার ক্ষেত্রে একত্রীকরণ তার প্যারেন্ট বা মূল ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।
একত্রীকরণের প্রস্তাবের বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের একত্রীকরণের ইচ্ছা সম্বলিত প্রস্তাব নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপনপূর্বক ওই বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
একীভূত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক যদি নাম পরিবর্তনের কোনও প্রস্তাব না করে, তাহলে ওই ব্যাংকের বিদ্যমান নাম এবং লাইসেন্সের অধীনে তার ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
তবে, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হলে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ও লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।
নীতিমালাটি দেশের সব ব্যাংক মানতে ‘বাধ্য’ বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কমেন্ট