একীভূত হলেও আমানত নিরাপদ: বাংলাদেশ ব্যাংক

একীভূত হলেও আমানত নিরাপদ: বাংলাদেশ ব্যাংক

একীভূত করার কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রতিটি ব্যাংকের হিসাবধারীদের বর্তমান হিসাব আগের মতো চলমান থাকবে।

একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এমন ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

একীভূত করার কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রতিটি ব্যাংকের হিসাবধারীদের বর্তমান হিসাব আগের মতো চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালক, বর্তমান পর্ষদ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতির ভিত্তিতেই একীভূতকরণের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।  

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাংক একীভূতকরণ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত তথ্যনির্ভর নয়। এ কারণে একীভূতকরণ নিয়ে জনমনে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

এই বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যাংক একীভূত করার উদ্দেশ্য ও ফলাফল বিষয়ে সবার জ্ঞাতার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি স্পষ্ট করতে চায়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ৪ এপ্রিল জারি করা নীতিমালা অনুসরণ করেই একীভূতকরণের সব কার্যক্রম সম্পাদন হবে।

এতে আরও বলা হয়, মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক একীভূতকরণ’ নিয়ে কাজ করছে। এগুলো হলো, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে কার্যকর ব্যাংকিং সেবা দিতে দেশে অধিক সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হবে, যাতে করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি না হয়।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটি হলো, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একইসঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক অধিকতর সেবা দিতে পারে।

ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ: টিআইবি

এদিকে ব্যাংক একীভূতকরণ দায়মুক্তির নতুন মুখোশ বলে সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তির আগে টিআিইবির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ব্যাংক একীভূতকরণের নামে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবি মনে করে, প্রস্তাবিত একীভূতকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণ খেলাপি ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে ‘দায়মুক্তি’ প্রদানের নামান্তর। তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ।

“ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এই কাজটি করতে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে।”

“স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে।”

টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত একীভূতকরণ নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো দুর্বল ব্যাংক চলতি বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশপূর্বক নিজস্ব সম্পদ ও দায়-দেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করে প্রকাশ করার কথা। যা বিবেচনায় নিয়ে সবল কোনো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকটিকে স্বেচ্ছায় একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক এই প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হলেই কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জোরপূর্বক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা।”

“গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে তাও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা ছাড়া, দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত?”

“অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর।”

এবার আলফালাহ ব্যাংক কিনে নিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া পরবর্তী

এবার আলফালাহ ব্যাংক কিনে নিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া

কমেন্ট