একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক

একীভূত হবে না ন্যাশনাল ব্যাংক

ঈদের ছুটির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব মেনে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে মত এলেও তা থেকে এখন সরে এসেছে ঋণ জালিয়াতি ও নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংক।

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের পর বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকও একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকটি যে একীভূত হতে চায় না—তা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে খুললেই পরিস্কার বোঝা যায়।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঝোলানো এক বার্তায় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়, “কোনো ব্যাংক যদি একীভূত হতে না চায় তবে তারা সেটি করতে পারবে বলে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।”

ঈদের ছুটির আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব মেনে ইউনাইটেড কর্মাসিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হওয়ার পক্ষে মত এলেও তা থেকে এখন সরে এসেছে ঋণ জালিয়াতি ও নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)।

শনিবার ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একিভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

৪০ বছরের বেশি পুরনো এ ব্যাংকের পর্ষদ একীভূত হওয়ার পরিবর্তে আরও সময় নেওয়ার পক্ষে মতামত দিলে ইউসিবিএলে সঙ্গে এনবিএলের একীভূতকরণের আলোচনা শুরুতেই ছেদ পড়ল।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, আপাতত এখনই অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না এনবিএল।

“একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনই না, আমরা কিছু সময় নিব। পরে দেখা যাবে।”

পরিচালক পর্ষদের সভায় সব পরিচালক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

এর কারণ হিসেবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির এক পরিচালক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “গত কয়েক মাসের পারফরমেন্স ভালো দেখা গেছে। ২০২৩ সালে আমাদের লোকসানের পরিমাণ কমেছে আগের চেয়ে।

“আমরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি টার্গেট ঠিক করেছি। যদি এই টার্গেট অ্যাচিভ করতে পারি বা ধারে কাছেও যেতে পারি, তাহলে ন্যাশনাল ব্যাংক কারও সঙ্গে মার্জ হবে না।”

প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পেরিয়ে আসার পর গত ৯ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে প্রায় একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড কর্মাসিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে এনবিএলের একীভূত হওয়ার খবর আসে। তখন ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সভায় আলোচনা হয় ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে। একীভূত হওয়ার বিষয়ে ওই পর্ষদ দ্বিধাবিভক্ত থাকায় কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছিল সভাটি।

তবে তখন চেয়ারম্যান সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেছিলেন, সবল কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত (মার্জার) হতে আলোচনা শুরু হয়েছে। কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চললেও এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি।

পুরোপুরি দেশি উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের প্রথম ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে একই বছর ১৯৮৩ সালে ব্যবসা শুরু করেছিল ইউসিবি।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম পরিশোধিত মূলধন থাকার পরও ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সৈয়দ ফরহাত আনোয়ারকে ডেকে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হতে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাব ও মধ্যস্ততার কারণে মূলত ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান।

তবে একীভূত হতে ব্যাংকটির যে আগ্রহ নেই তা বোঝা যায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ঝোলানো এক বার্তায়।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়, “কোনো ব্যাংক যদি একীভূত হতে না চায় তবে তারা সেটি করতে পারবে বলে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।”

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ একে একে ভেস্তে যাচ্ছে।

একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো ব্যাংক একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না।

ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়টি সামনে আসার পর এক্সিম ব্যাংকে পদ্মা, সোনালীতে বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষির সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং সিটি ব্যাংকে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এক হওয়ার উদ্যোগের মধ্যে এনবিএল ও ইউসিবির মার্জারের খবর আসে।

বেসিক ও সিটি ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোর একীভূত হওয়ার বিষয়ে নিজ নিজ পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্সিম ও পদ্মা ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হলেও অপেক্ষায় আছে সোনালী ও বিডিবিএল এবং কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ।

অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুদের ওপর কোনো কর নয় পরবর্তী

অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুদের ওপর কোনো কর নয়

কমেন্ট