একদিনেই ডলারের দর বাড়ল ৭ টাকা

একদিনেই ডলারের দর বাড়ল ৭ টাকা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরের মধ্যেই টাকার এই বড় অবমূল্যায়ন করল বাংলাদেশ ব্যাংক।

নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এবার ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এর মধ্য দিয়ে একদিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়ন হয়েছে; ডলারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা।

অর্থাৎ একদিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেতে সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরের মধ্যেই টাকার এই বড় অবমূল্যায়ন করল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। আইএমএফের চাওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পথে এগোয়।

'ক্রলিং পেগ' বিনিময় হার চালুর মাধ্যমে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে দেশের ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকাকে মাঝামাঝি মূল্য ধরে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে।

বুধবার অনুষ্ঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া সভায় ‘স্মার্ট লেন্ডিং রেট’ প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনিটারি পলিসি কমিটি।

সভার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে,এখন থেকে ডলারের মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। এর সঙ্গে ১ টাকা যোগ ও ১ টাকা বিয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর মানে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৮ টাকা।

এতোদিন ডলার বিক্রির আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১১০ টাকা। অর্থাৎ আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর ছিল ১১০ টাকা। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে এই দরে ডলার কিনত। বাংলাদেশ ব্যাংকও ১১০ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনত ও বিক্রি করত।

তবে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করত। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১২৭ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পরে অবশ্য তা ১২০ টাকার নিচে নেমে আসে।

গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। মোট সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেওয়ার কথা। দুই কিস্তির ঋণ ইতোমধ্যে ছাড় করেছে সংস্থাটি। তৃতীয় কিস্তি চলতি মাসের শেষের দিকে ছাড় করার কথা। এই ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে।

একসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করে দিত। কিন্তু বাজার অস্থির হয়ে উঠলে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের দাম ঠিক করে আসছিল।

সর্বশেষ তারা ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকায় নির্ধারণ করেছিল।

কিন্তু বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, বুধবার থেকেই মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের জন্য ‘ক্রলিং পেগ মিড-রেট’ (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে আন্তব্যাংক ও গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনে তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এখন থেকে ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা বা এবিবির কার্যত কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কীভাবে এই পদ্ধতি চালু হবে, তা নিয়ে আইএমএফের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মার্চের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু করার কথা বললেও মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিল।

আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল এখন বাংলাদেশ সফর করছে।

তৃতীয় কিস্তির ১.১৫ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ পূর্ববর্তী

তৃতীয় কিস্তির ১.১৫ বিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ

নীতি সুদহার বেড়ে ৮.৫০ শতাংশ, ‘স্মার্ট’ বাতিল পরবর্তী

নীতি সুদহার বেড়ে ৮.৫০ শতাংশ, ‘স্মার্ট’ বাতিল

কমেন্ট