সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি বিডিবিএলের
এই চুক্তি সইয়ের পর এখন ব্যাংক দুটির সম্পদ ও দায় পর্যালোচনা করা হবে। এরপরই নানা প্রক্রিয়া শেষে একীভূত হবে ব্যাংক দুটি।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে ‘স্বেচ্ছায়’ একীভূত হওয়ার জন্য আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) সমঝোতা চুক্তি করেছে।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই চুক্তি সই হয়। এ সময় সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই চুক্তি সইয়ের পর এখন ব্যাংক দুটির সম্পদ ও দায় পর্যালোচনা করা হবে। এরপরই নানা প্রক্রিয়া শেষে একীভূত হবে ব্যাংক দুটি।
এদিকে একীভূত হওয়ার চুক্তিতে আতঙ্কে ভুগছেন বিডিবিএলের কর্মীরা। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একীভূত হওয়ার তিন বছর পর দুর্বল ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অধিগ্রহণকারী ব্যাংক।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস সাংবাদিকদের বলেন, “বিডিবিএলের চারটি সূচকের মধ্যে শুধু একটি দুর্বল অবস্থায় আছে। সেটি হলো- খেলাপি ঋণ, যা আগে ছিল ৪১ শতাংশ। এক বছরে তা কমিয়ে আমরা ৩৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। ছয় মাসে আবার খেলাপি ঋণের হার ৩৪ থেকে ৫-১০ বা ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব না।”
বিডিবিএলের কর্মীরা একীভূত না হতে ইতিমধ্যে খোলাচিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস বলেন, “এখানে দুই ব্যাংকের পর্ষদ মিলে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অনেক কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেটা ভালো হয়, সেটাই করা হয়েছে।”
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, “অনেক চিন্তাভাবনা করেই আমরা বিডিবিএলকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনও চাপের মুখে না, নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দুই ব্যাংকের দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাব।”
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, এই মুহূর্তে সোনালী ব্যাংকের আমানত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অপর দিকে বিডিবিএলের আছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা প্রায় ৫০ ভাগের ১ ভাগ। একই অবস্থা ঋণের ক্ষেত্রেও। কাজেই এটার খুব বেশি প্রভাব সোনালী ব্যাংকের ওপর পড়বে না।
তিনি বলেন, “বিডিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শঙ্কিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আমাদের প্রায় আট হাজার কর্মী আছেন, তারপরও অনেক লোকবল প্রয়োজন। আর বিডিবিএলের ছয়শর মতো কর্মী আছেন। এ জন্য তাদের শঙ্কার কিছু নেই।”
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ দফা রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই রোডম্যাপের আলোকে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা মার্জার করার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৪ মার্চ দুর্বল পদ্মা ব্যাংক ও সবল এক্সিম ব্যাংক একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সে সিদ্ধান্তের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের উপস্থিতিতে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।
এর পর গত ৩ এপ্রিল সরকারি খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর ৮ এপ্রিল সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে এবং ৯ এপ্রিল বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক বা ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। একীভূত করার কোনও সিদ্ধান্তই স্বেচ্ছায় নেওয়া হয়নি, বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাধ্য করেছে।
বেসিক ব্যাংক সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার হবে না বলে আগেই জানিয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হবে না—সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চার মাস আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গঠন করে দেওয়া পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
সেই পর্ষদও বলছে, তারা কোনও ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে না। সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি জানিয়েছেন নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কমেন্ট