সুদহার ১৪ শতাংশ ডলারে দর ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে, আশ্বাস গভর্নরের

সুদহার ১৪ শতাংশ ডলারে দর ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে, আশ্বাস গভর্নরের

বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে ঋণের সুদের হার নিয়ে উদ্বেগ জানালে গভর্নর এই আশ্বাস দিয়েছেন। ফাইল ছবি

ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৪ শতাংশের উপরে যাবে না বলে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ডলারের দাম ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন গভর্নর।

বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে ঋণের সুদের হার ও ডলারের দর নিয়ে উদ্বেগ জানালে গভর্নর এই আশ্বাস দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “ব্যাংকগুলোকে ঋণের সুদ নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে গভর্নর আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সুদহার ১৪ শতাংশের ওপরে উঠবে না। আর ডলারের দাম ১১৭ টাকার আশপাশে থাকবে।”

“একইসঙ্গে গভর্নর আমাদের বলেছেন যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের চলমান সংকট কেটে যাবে।”

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “বৈঠকে আমরা গভর্নরকে বলেছি, ব্যাংকঋণের সুদহার ও ডলারের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কোনো নীতিমালায় হঠাৎ পরিবর্তন না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদি নীতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি আমরা। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার কারণে ব্যবসায় যে লোকসান হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করার প্রস্তাব করেছি আমরা।”

“আমাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর জানিয়েছে যে, সুদহার ১৪ শতাংশের ওপরে উঠবে না। আর ডলারের দাম ১১৭ টাকার আশপাশে থাকবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডলারের চলমান সংকট কেটে যাবে “

মাহবুবুল আলম বলেন, “অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভর্নরকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। ডলারের দামের বিষয়ে গভর্নর আমাদের বলেছেন যে ডলারের দাম ১১৭ টাকার মধ্যে থাকবে। ব্যাংকভেদে এক টাকা কমবেশি হতে পারে। প্রত্যেক ব্যবসায়ী যেন একই দামে ডলার পান, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বলেছি।

“এখনো ডলারের কিছু সমস্যা আছে, তবে আগের চেয়ে সমস্যা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।”

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “বারবার নীতি পরিবর্তন করায় ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছে। সামনে এভাবে বারবার নীতি পরিবর্তন হবে না বলে আমাদের জানানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতি নিলে ভালো হয়, এটা আমরা গভর্নরকে জানিয়েছি।”

সুদের হার প্রসঙ্গে মাহবুবুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে, সুদহার নির্ধারণের দায়িত্ব বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সুদের হার ১৪ শতাংশের বেশি উঠবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১ শতাংশ কমবেশি হতে পারে। এসএমই খাতের ওপর অতিরিক্ত ১ শতাংশ মাশুল প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।”

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, “ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী ১০০ কোটি টাকা, কেউ আবার ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন। এসব হিসাব ব্যাংকগুলোর কাছে আছে। এই লোকসানের অর্থ দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করে পুনঃ তফসিল করে দেওয়ার জন্য আমরা বলেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এতে রাজি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “কোনো সৎ ব্যবসায়ী অর্থ পাচার করতে পারেন না। আমরা অসৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নেই।”

সভা শেষে তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান বলেন, “দুই-তিন মাসের মধ্যে আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল ছাড়া অন্য এলাকায় স্থাপন করা কারখানার জন্য ঋণ দেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে সিদ্ধান্ত, তা প্রত্যাহারের জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। দেশের ৫০-৮০ ভাগ কারখানা এসব অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত।”

নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার যে নতুন শর্ত ঠিক করা হয়েছে, তা শিথিল করার জন্য ব্যবসায়ীরা অনুরোধ করেছেন বলে তিনি জানান।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের দাম এত দিন ১১০ টাকা ছিল। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম আরও অনেক বেশি ছিল। এখন এর দাম ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের দাম যেন হঠাৎ করে না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা দরকার।

তিনি বলেন, “সুদহার ও ডলারের দামের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়বে। ডলারের দামের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তর করার জন্য পথনকশা প্রণয়ন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ব্যবসা থেকে প্রস্থান করার কোনো নীতি নেই, এমন নীতিমালা করা দরকার।”

সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের মধ্যে আরও ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি আমীন হেলালী, বস্ত্র শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি (এমসিসিআই) কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও চট্রগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ।

আরও উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. হাসান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর ছাড়া চার ডেপুটি গভর্নর ও বিভিন্ন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আতঙ্কে এক মাসেই আমানত কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা পরবর্তী

আতঙ্কে এক মাসেই আমানত কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা

কমেন্ট